এমন একটা আমল আছে, যেটা সকল মুশকিলের আসান, সকল পরিস্থিতির সমাধান, সকল বিপদের বন্ধু এবং সকল গুনাহ মাফের উপায়। সেই আমলটার এমনই মহিমা যে বলা আছে আপনার অন্য কোন আমল কবুল হোক আর না হোক, সেই আমল টা কবুল হবেই। আবার আমাদের দোয়া এমনি কবুল হোক না হোক, সেই আমলটা করলে কবুল হবেই। বলুন তো আমি কোন আমলের কথা বলছি? আর সেই আমলের এত মাহাত্ম্যের ব্যাখ্যা কি?
সেটা হল, দুরুদ শরীফ এর আমল।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহপাক এত বেশি সম্মানিত করেছেন, তাকে তিনি এত বেশি ভালোবাসেন, যে পবিত্র কোরআন শরীফে রসূলে পাক এর ব্যাপারে বারে বারে প্রশংসা করার সাথে একথাও বলেছেন, আল্লাহপাক এবং তাঁর ফেরেশতারা রসূলের প্রতি দরুদ পাঠ করে, বান্দারা ও যেন রাসুল সাঃ এর প্রতি বেশি বেশি দরুদ পাঠায়।
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ নবির উপর রহমত নাজিল করেন এবং ফেরেশতারা তাঁর জন্য রহমতের দোয়া করেন। সুতরাং হে মুমিনগণ! তোমরাও তাঁর প্রতি দরূদ পড় এবং অধিক পরিমাণে সালাম পাঠাও।’ (সুরা আহজাব : আয়াত ৫৬)
যে আমল আল্লাহপাকের সুন্নত, যে আমল ফেরেশতারা করে, সে আমল আমরা করলে আল্লাহ পাক নিজ উৎসাহেই তা কবুল করবেন। কারণ এ আমল আল্লাহপাকের প্রিয় হাবিবের প্রতি আমাদের হৃদয়ের গভীর ভালোবাসা মিশ্রিত তোহফা যা প্রকারান্তরে মহামহিম আল্লাহপাকের প্রতি আমাদের একান্ত আনুগত্যের উপঢৌকন। একথা নিশ্চিত যে, মহান রাব্বুল আলামিন তাঁর প্রিয় হাবিব কে খুশি করতে এই তোহফা ফিরিয়ে দেবেন না।
ঈদে মেয়েদের চমৎকার মেহেদি ডিজাইন
এখন এই আমল সকল বিপদ আপদ বালা মুসিবত রোগ-শোক গুনাহ মাফ সকল কিছুতেই কার্যকর, এটা কিভাবে হয়? হয় কারণ এর পিছনে লুকিয়ে আছে উম্মতের প্রতি রাহমাতুল্লিল আলামীনের অপরিসীম ভালোবাসা। জীবিতাবস্থায় যেমন তিনি সর্বদা উম্মতের কল্যাণের কথা চিন্তা করে পেরেশান থাকতে, মাটির নিচের জীবনেও তিনি তেমনি উম্মতের জন্য দোয়া করেন, আর হাশরের ময়দানে তো উম্মতের শাফায়াতের জন্য বারে বারে রব্বুল আলামীনের পায়ে লুটিয়ে পড়বেন। তাঁর কোন উম্মত কষ্ট পাক, বিপদে পড়ুক, জাহান্নামে যাক, এটা তাঁর জন্য অসম্ভব বেদনাদায়ক। তাই আমরা যখন আমাদের কোন কষ্ট যাতনা দূর করার জন্য আমাদের দুআর সাথে দুরুদ পড়ি, এবং এই দুরুদ যখন ফেরেশতারা তাঁর কাছে আমাদের নাম এবং বংশ পরিচয় সহ পৌঁছান, তিনিও তখন আমাদের কল্যাণের জন্য দোয়া করেন, আমাদের ব্যথায় ব্যথিত হন, আমাদের হেদায়েতের জন্য, গুনাহ মাফের জন্য আল্লাহ পাকের কাছে আকুতি জানান। এখন বলুন, আমাদের মত পাপীর দোয়া, আল্লাহপাকের কাছে পৌঁছাক আর না পৌঁছাক, তিনি কবুল করেন আর না করেন, তাঁর হাবিব যখন তার কাছে কোন কিছু চেয়ে দোয়া করেন, তখন কি তিনি তা ফিরিয়ে দিতে পারবেন !!! তাই রাসূলে করীম সাঃ আমাদেরকে নির্দেশ দিয়ে গেছেন আমরা যেন আমাদের দোয়ার বেশিরভাগ অংশ জুড়ে তার প্রতি দরুদ পাঠানোর ব্যাপারে জোর দেই, এটা তাঁর কোন স্বার্থে নয়, বরং আমাদেরই কল্যাণার্থে।
- হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আছ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেন, ‘যে আমার উপর একবার দরূদ পড়বে; বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা তার উপর দশটি রহমত নাজিল করবেন।’ (মুসলিম, তিরমিজি)
- হজরত আমের ইবনে রবীআহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে খুতবার মধ্যে এ কথা বলতে শুনেছি- ‘যে আমার উপর দরূদ পাঠকারী যতক্ষণ দরূদ পড়ে ফেরেশতারা তার জন্য দোয়া করতে থাকে। সুতরাং বান্দার ইচ্ছা, সে দরূদ বেশি পড়বে না কম।’ (মুসনাদে আহমদ, ইবনে মাজাহ, মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা)
- হযরত উবাই ইবনে কাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, একদা আমি আরয করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমি আপনার নামে অধিক পরিমাণে দরুদ পাঠ করি; অতএব দরুদ পাঠের জন্য আমি কতটুকু সময় নির্দিষ্ট করব?
_ হযরত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
যতটুকু তুমি চাও। আমি বললাম, এক চতুর্থাংশ সময়। আঁ_ হযরত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যতটুকু তুমি চাও; আর যদি আরও বেশি কর, তবে তোমার জন্য ভালো হবে। আমি বললাম, অর্ধেক সময়? আঁ_ হযরত ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যতটুকু তুমি চাও আর যদি আরও বেশি কর, তবে তা তোমার জন্য ভালো হবে। আমি বললাম_ তবে দুই তৃতীয়াংশ সময়। আঁ_ হযরত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যতটুকু তুমি চাও আর যদি আরও বেশি কর, তবে তা তোমার জন্য ভালো হবে। আমি বললাম, আমি আপনার উপর দরুদ পাঠের জন্য আমার সমুদয় সময় নির্দিষ্ট করব। আঁ_ হযরত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তবে তোমার যাবতীয় সমস্যা সমাধানের জন্য যথেষ্ট হবে এবং তোমার দ্বীন ও দুনিয়ার সকল উদ্দেশ্য পূর্ণ হবে আর তোমার সমস্ত গোনাহ্ মাফ হবে। (তিরমিযী)
- হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহুর বলেন- ‘যে পর্যন্ত তুমি তোমার নবির উপর দরূদ না পড়বে, ততক্ষণ তোমার দোয়া আসমানে যাবে না। আসমান-জমিনের মাঝে তা ঝুলে থাকবে।’
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত সব সময় প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর বেশি বেশি দরূদ পড়া। বিশেষ করে যে কোনো প্রয়োজনের দোয়ার আগে দরূদ পড়ে নেয়া।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তাদের সৌভাগ্যের সব রহমত বরকত মাগফেরাত লাভে বেশি বেশি দরূদ পড়ার তাওফিক দান করুন। হাদিসে ঘোষিত দরূদের সব ফজিলত ও মর্যাদা লাভ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।