ছোলা বা বুট, দুই নামেই আমাদের নিকট এটি পরিচিত, তেমনি ছোলার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণগুলোও অনেকের কাছে অজানা। আমাদের এশিয়া মহাদেশে সাধারণত ২ ধরনের ছোলার সন্ধান পাওয়া যায়। ছোলা দুইটি হলো দেশী ছোলা ও কাবুলী ছোলা। মুখরোচক এবং পুষ্টি উপাদানগুলো যথাযথভাবে থাকায় বাংলাদেশের মানুষদের কাছেও বেশ জনপ্রিয় একটি খাবার হিসেবে খ্যাত। বিশেষ করে রমজানে প্রায় প্রত্যেক মুসলিম পরিবার ছোলা সংগ্রহ করে থাকে।
ছোলার পুষ্টিগুণ
ছোলার পুষ্টিগুণ উপাদান হিসেবে যথেষ্ট পরিমাণে ক্যালরি, ফ্যাট, শর্করা, আমিষ, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট ইত্যাদি সঠিক পরিমাণে থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম বিশুদ্ধ ছোলাতে আমিষ থাকে ১৮-২০ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট থাকে ৬০-৬৫ গ্রাম, ফ্যাট থাকে ৫-১০ গ্রামের কাছাকাছি। ছোলাতে যে পরিমাণ শর্করা থাকে তার মধ্যে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স খুবই কম থাকে। সাধারণত দৈনন্দিন জীবনে আমরা যে সমস্ত খাবারগুলো খেয়ে থাকি, তা খাওয়ার সাথে সাথেই হজম হয়ে গ্লুকোজ হয়ে যায় এবং রক্তের সাথে মিশে শরীরে প্রবাহিত হওয়া শুরু করে। কিন্তু ছোলার ক্ষেত্রে এই চক্রটি ভিন্নভাবে হয়ে থাকে। অর্থাৎ ছোলা খাওয়ার পর পাকস্থলিতে গিয়ে সাথে সাথে হজম হয় না এবং গ্লুকোজ রক্তের সাথে মিশে না। যে কারণে ডাক্তারগণ ডায়াবেটিস রোগীদের স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য ছোলার শর্করাকে অনেক ক্ষেত্রেই সাপোর্ট করে থাকে।
কিন্তু ছোলাতে রয়েছে ফ্যাট বা তেল, এটি কী আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়? ছোলাতে যে ফ্যাট বা তেল রয়েছে তার অধিকাংশ অংশই হলো পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট বা তেল, যা আমাদের শরীরের জন্য মোটেও বেশি ক্ষতিকারক নয়।
উপরোক্ত গুণগুলো ছাড়াও ছোলাতে আছে আরো বহুমুখী উপকারিতা। ছোলাতে আছে ভিটামিন, আয়রণ, লবণ, লৌহ, ম্যাগনেসিয়াম এবং ক্যালসিয়াম সহ আরো অনেক প্রকারের উপকারি উপাদানসমূহ। আর এসব উপাদান শরীর সুস্থ্য রাখতে কার্যকারী ভূমিকা রাখে। আমরা যদি হিসেবটা প্রতি ১০০ গ্রামে করি, তাহলে হিসেবটা হলো শতকরায় ছোলায় থাকে ১৭০-২০০ মি.গ্রাম ক্যালসিয়াম, ৫-১০ মি.গ্রাম লৌহ, ভিটামিন (ভিটামিন-এ) প্রায় ২০০ মাইক্রোগ্রাম।
এছাড়াও শরীরের উপকারি উপাদান হিসেবে ফসফরাস, ভিটামিনি বি-১, ভিটামিনবি-২ থাকে। এসব উপাদান আমাদের শরীরের সুস্থ্যতা নিশ্চিত করতে বেশ উপকারি।
আমাদের দেশে সাধারণত দুই ধরনের ছোলাই পাওয়া যায়। দেশী ও কাবুলী ছোলা। দেশী ছোলাটা সহজেই চিনতে পারা যায়। আকারে অপেক্ষাকৃত একটু ছোট, শক্ত ও কালচে কালচে একটা ভাব থাকে। আর কাবুলী ছোলার ক্ষেত্রে দেশী ছোলা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধর্মী। কাবুলী ছোলা দেখতে কিছুটা উজ্জ্বল, অপেক্ষাকৃত মোটা ও নরম থাকে। আমাদের এশিয়া মহাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়া মহাদেশে এই দুই ধরনের ছোলাগুলোই পাওয়া যায়।
দেশী ছোলাগুলো আমাদের বাংলাদেশেই উৎপাদন হয় কিন্তু কাবুলী ছোলার ক্ষেত্রে একটু ভিন্নতা রয়েছে। কাবুলী ছোলা সাধারণত পাকিস্থান, আফগানিস্থান, দক্ষিণ ইউরোপ সহ ইউরোপ কান্ট্রির অনেক দেশে উৎপাদন করে থাকে।
ছোলা অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং সহজলভ্য খাবার হওয়াই উপমহাদেশের মানুষদের কাছে খুব প্রিয় একটি খাবার। প্রতি রোজায় মুসলিমগণ প্রচুর পরিমাণ ছোলা সংগ্রহ করে থাকে এবং এগুলো ইফতারে আহার করে থাকে। বর্তমানে শুধু ইফতারেই ছোলা সীমাবদ্ধ নয়, এমনিতেও বাঙ্গালী ছোলা মুড়ির সাথে খায়। ছোট ছোট টং জাতীয় শহর-গ্রামের দোকানগুলোতে ছোলা প্রতিদিন সকালে বিক্রি করে থাকে। ছোলা আমিষের একটি বিরাট অংশ। গরুর মাংস, খাসির মাংশ, মুরগির মাংসের মতোই ছোলাতে রয়েছে আমিষের পরিমাণ। নিয়মিত ছোলা খেলে শরীরের আমিষের ঘাটতি পূরণ করতে মাছ-মাংসের বেশি প্রয়োজন পড়ে না। কেননা অধিকাংশ আমিষের ঘাটতি ছোলাই পূরণ করে ফেলে। জেনে রাখা ভালো যে, আমাদের দেহের জন্য পাশাপাশি কাঁচা ছোলা অত্যন্ত উপকারি। ভাঁপা ছোলার চেয়ে কাঁচা ছোলা আরো বেশি উপকারি।
এক সাথে আমিষ ও অ্যান্টিবায়োটিক পেতে হলে কাঁচা ছোলাকে প্রথমে পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে এবং কিছু এভাবে ভিজিয়ে রাখার পর ছোলার খোঁসা ছড়িয়ে ফেলতে হবে। এবার কাঁচা মরিচ বা আদা দিয়ে খেতে হবে। এভাবে খেলে শরীরে একই সাথে আমিষ ও অ্যান্টিবায়োটিক উপাদান পাওয়া যায়। আমিষ ও অ্যান্টিবায়োটিক উপাদান আমাদের শরীরে যথাক্রমে স্বাস্থ্যবান ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
ছোলার খাওয়ার উপকারিতা
শারীরিকভাবে ছোলার উপকারিতা কম নয়। শরীর সুস্থ্য রাখতে এবং হাঁড় মজবুত রাখতে ছোলা বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ভিন্ন ভিন্ন অসুখের ক্ষেত্রেও ছোলা বেশ উপকারি। চলুন জানা যাক ছোলার উপকারিতাগুলো-
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে ছোলা
সাধারনত হাইপারটেনশন থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য ফলিক এসিডযুক্ত খাবার খেতে হয় বা ঔষধ খেতে হয়। ফলিক এসিড মহিলাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে পাশাপাশি পুরুষদেরও। ছোলাতে আছে যথেষ্ট পরিমাণে ফলিক এডিড। সুতরাং ব্লাডপ্রেসার বা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ছোলা বেশ কার্যকারী। তাই মেয়েদের হাইপারটেনশন রোধ করতে নিয়মিত ছোলা খাওয়া হতে পারে অনন্য একটি উপায়।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে ছোলার ভূমিকা
শরীরে কোলেস্টেরল এর পরিমাণ কমাতে হৃদরোগের ঝুঁকি কমাত খাবারে দ্রবণীয় এবং অদ্রবণীয় উভয় উপাদানের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। একদল গবেষক ছোলার পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা নিয়ে গবেষণা চালায়, এবং গবেষকরা প্রকাশ করেন যে যদি কোনো কোলেস্টেরল রোগী তার দৈনন্দিন খাবারে ছোলা যুক্ত করে তাহলে তার দেহে অবস্থিত কোলেস্টেরল কমতে বা হ্রাস হতে শুরু করে এবং এতে করে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশেই হ্রাস পায়। ছোলাতে থাকা আঁশ, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-বি ইত্যাদি রক্তে কোলেস্টেরল এর হার কমায় এবং উক্ত উপাদানগুলো হৃদরোগকে কমিয়ে দেয়। এই উপাদানগুলো হৃৎপিন্ডকে স্বাস্থ্যসবল রাখতে বেশ কার্যকারী ভূমিকা রাখে।
ছোলা রক্ত প্রবাহে সহায্য করে
ছোলাতে রয়েছে আইসোফ্লাভন ইস্কেমিক । এই বিশেষ উপাদানটি স্কোকে আক্রান্তু হওয়ার সম্ভাবনাময় রোগীদের জন্য বেশ উপকারি। নানা কারণে আমাদের পায়ের আর্টারিতে রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি হয়। কিন্তু ছোলা খেলে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হয়। পাশাপাশি হৃৎপিন্ডে রক্ত চলাচলেও সহায়তা করে থাকে।
ক্যান্সার রোধে ছোলা
ছোলাতে রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণ ফলিক এসিড। অতিরিক্ত ফলিক এসিড নারী বা মহিলাদের কোলন ক্যান্সার রোধে কার্যকারী ভূমিকা রাখে। এছাড়াও ফলিক এসিড রেক্টাল ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকাংশে কমিয়ে ফেলে। আমাদের অনেকের শরীরের এলার্জি জনিত সমস্যা থাকে। এছাড়াও কারো আবার রক্তেও এলার্জি থাকে। ফলিক এসিড রক্তে অবস্থিত এলার্জি কমাতে বেশ উপকারক একটি উপাদান। তাই উপরোক্ত উপকারিতাগুলো পেতে আমাদের অবশ্যই নিয়মিত ছোলা খাওয়ার অভ্যাস গড়তে হবে।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে ছোলা
ছোলাতে আছে বিভিন্ন রকমের খনিজ পদার্থ এবং এর মধ্যে থাকা ফ্যাট বা তেলের বেশির ভাগ অংশই হলো পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট বা তেল। উক্ত উপাদানটি আমাদের শরীরের জন্য মোটেও ক্ষতিকর নয়। বরং পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট আমাদের দেহে থাকা অতিরিক্ত ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমিয়ে দেয়। এছাড়াও আছে ছোলাতে রয়েছে প্রোটিন, আমিষ, ভিটামিন ইত্যাদি, যা আমাদের শরীরের জন্য বেশ উপকারক।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ছোলা
ছোলাতে থাকে প্রচুর পরিমাণে আঁশ। আঁশ সাধারণত আমাদের দেহে খাদ্য হজমে সহায়তা করে থাকে। আঁশ কোনো ভাবেই পাকস্থলিতে হজম হয় না। ফলে সারাসরি তা পায়খানার মাধ্যমে বের হয়ে যায়। যে কারণে যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা আছে, তাদের জন্য আঁশ জাতীয় খাদ্য ডাক্তাররা প্রেপার করে থাকে। আর ছোলাতেও রয়েছে প্রচুর পরিমাণ আঁশ।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ছোলা
ছোলাতে থাকা খুব কম পরিমাণ শর্করা রক্তে থাকা গ্লুকোজের মাত্রাকে কমাতে সহায্য করে। ছোলাতে রয়েছে উচ্চ পরিমাণে আঁশ। এবং এই সব আঁশ এক ধরনের ডাল হিসেবে কাজ করে । ছোলাতে থাকা শর্করা দেহে খুব আস্তে আস্তে বাড়ে যা দেহের জন্য মোটেও ক্ষতিকর নয়। অন্য দিকে রক্তে থাকা অতিরিক্ত পারিমাণ গ্লুকোজ কমিয়ে ফেলে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ছোলার গুরুত্ব অত্যবশ্যকীয়।
ছোলা বুকের কফ সারায়
কারো যদি দীর্ঘদিন যাবত শুকনো কাশ বা ঠান্ডা লেগে থাকে তাহলে তার শ্বাসনালিতে কফ জমা হয়। এতে করে নিঃশ্বাস নিতে অসুবিধা ফিল হয় পাশাপাশি শো শো আওয়াজ হয়। এমতোবস্থায় যদি কেউ ছোলা খায় নিয়মিত, তাহলে শ্বাস নালিতে জমে বা আঁটকে থাকা কফ বের হয়ে যায়।
রক্তে চর্বি হ্রাস করতে ছোলা
রক্তের মধ্যে থাকা চর্বি গলাতে এবং কমাতে ছোলাতে থাকা পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশ কার্যকারী। তাই যে সকল লোক নিয়মিত ছোলা তাদের খাবারে রাখে, তুলনামূলকভাবে তাদের রক্তে চর্বি খুব কম পরিমাণে থাকে।
রোগ প্রতিরোধ বৃদ্ধি করতে ছোলা
আমাদের শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক উপাদান দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। কাঁচা ছোলা আদার সাথে মিক্স করে খেলে প্রচুর পরিমাণে আমিষ ও অ্যান্টিবায়োটিক উপাদান পাওয়া যায়। তাই শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ছোলা খেতে হবে।
শরীরে শক্তি তৈরিতে ছোলা
প্রতি ৫০ গ্রাম ছোলাতে রয়েছে প্রায় ১৬০ কিলো-ক্যালরি শক্তি। শরীরের শক্তি বৃদ্ধিতে ছোলা বেশ কার্যকারী ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও ছোলাতে থাকা ক্যালরি শরীরে দীর্ঘক্ষণ স্থায়ী থাকে।
হাত-পায়ের জ্বালাপোড়া কমাতে ছোলা
সালফার জাতীয় পদার্থ আমাদের শরীরের জন্য বেশ উপকারি। আমাদের হাতের জ্বালাপোড়া কমাতে, পায়ের তালুর জ্বালাপোড়া কমাতে, গা জ্বালাপোড়া কমাতে এবং মাথা গরম হয়ে যাওয়া রোধে সালফার বেশ ভালো কার্যকারী। ছোলাতে রয়েছে সালফার নামক বিশেষ উপাদান। যা উক্ত জ্বালাপোড়া কমাতে কার্যকারী।
উপরোক্ত উপকারিতা ও পুষ্টিগুণগুলোই হলো ছোলার উপকারিতা। এছাড়াও বেশ আরো উপকারিতা রয়েছে ছোলার, যা নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখার মাধ্যমে আমরা উপকৃত হতে পারি।
এবার চলুন জানা যাক ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের ছোলা খাওয়ার উপকারিতাগুলো-
রান্না ছোলা খাওয়ার উপকারিতা
রান্না করা ছোলার খাওয়ার মজাই আলাদা তেমনি এর উপকারিতা ও রয়েছে অনেক। আমরা অনেকেই আছি প্রতিদিন সকালে রান্না করা ছোলা দিয়ে মুড়ি খাই। পাশাপাশি মরিচ ইত্যাদি খাই। তবে আমাদের অনেকেরেই অজানা রয়ে গেছে যে রান্না ছোলা খাওয়ার বহুমুখী উপকারিতা সম্পর্কে। রান্না ছোলা খাওয়ার মাধ্যমে হৃদরোগের ঝঁকি অনেক কমে যায়। পাশাপাশি যাদের কোলেস্টেরল রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে রয়েছে আরো উপকারিতা। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে ফেলে রান্না করা ছোলা। এছাড়াও রান্না করা ছোলা থেকে ভিটামিন ও আয়রণ জাতীয় পাদার্থগুলো পেতে পারি। সার্বিকভাবে রান্না করা ছোলা দেহের জন্য বেশ উপকারি।
সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে যে আমাদের জন্য রান্না করা ছোলা কতটা উপকারি।
কাচা ছোলা খাওয়ার উপকারিতা
রান্না ছোলার পাশাপাশি কাঁচা ছোলার উপকারিতাও কম নয়। কাঁচা ছোলা আমাদের শক্তি বৃদ্ধি করে থাকে। হাত-পায়ের মোচড়ানো কমায়, গিটে থাকা দীর্ঘদিনের ব্যথা কমাতেও কাঁচা ছোলা বেশ উপকারি। কাঁবা ছোলা খেলে দেহের মধ্যে থাকা অতিরিক্ত সুগ্যার বের করে দেয়। এছড়াও কাঁচা ছোলাতে রয়েছে আয়রণ ও মিন্যারেল জাতীয় পদার্থ। শরীর সুস্থ্য রাখতে উক্ত উপাদানগুলো খুবই দরকারী আমাদের শরীরের জন্য।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে কাঁচা ছোলা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতেও সহায়তা করে থাকে। আবার কাঁচা ছোলাতে রয়েছে ফাইবার । যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। রান্না করা ছোলার ন্যায় যদি কাঁচা ছোলাকেও আমরা সামগ্রিকভাবে ভাবি, তাহলে বলতে পারি যে কাঁচা ছোলার খাদ্য উপাদানগুলো শরীর সুস্থ্য রাখতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ছোলা ভাজা খাওয়ার উপকারিতা
ভাজা ছোলা খাওয়ার মাধ্যমে তাৎক্ষণিক উপকার পাওয়া যায়। ভাঁজা ছোলাতে থাকা ফাইবার দৈনিকের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এছাড়া থাকে আদ্রতা, আয়রণ ও ক্যালসিয়াম। পাশাপাশি রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট। ছোলা ভাজা খাওয়ার মাধ্যমে এসব পুষ্টি উপাদানগুলো পাওয়া সম্ভব। ভাজা ছোলা দেহে শক্তি উৎপাদন করতে তৎপর। তাই
উক্ত উপকারিতাগুলো পাওয়ার জন্য ভাজা ছোলা খাওয়া যেতে পারে।
ছোলার খোসার উপকারিতা
এক মুঠো কাঁচা ছোলার খোসায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও আয়রণ। এছাড়াও রয়েছে অ্যান্টিবডি। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ছোলার খোসা জ্বর সারাতে কার্যকারী। ছোলাতে থাকা ভিটামিনের অধিকাংশ অংশই তাকে ছোলার খোসার মধ্যে। খোসার উপাদান শরীরের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে বেশ কার্যকারী। সামগ্রিকভাবে ছোলার খোসা শরীরের জন্য খুবই ভালো।
রাতে কাচা ছোলা খাওয়ার উপকারিতা
প্রতিদিন রাতে যদি কেউ এক মুঠো কাঁচা ছোলা প্রতিনিয়ত খায়, তাহলে দীর্ঘদিন ধরে থাকা তার শরীরে ব্যথা হ্রাস পায়। অনেকের হাটুর গিড়ায় এবং জয়েন্টে জয়েন্টে থাকে প্রচুর ব্যথা। এসব ব্যথা কমিয়ে ফেলে ছোলা। শারীরিক অনেক চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রেও রাতে ছোলা খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে। যেমন – যৌন শক্তি বৃদ্ধিতে ছোলা খুবই কার্যকারী। ছোলাতে থাকা বিশেষ উপাদান শরীরের জড়তা কাটাতে খুব সাহায্য করে। রাতে ঘুমানোর পূর্বে কাচা ছোলা খেলে উক্ত উপকারিতাগুলো পাওয়া সম্ভব।
কাঁচা ছোলা ও বাদাম খাওয়ার উপকারিতা
বাদাম ও কাঁচা ছোলা একত্রে খেলে শারীরিক অনেক উপকার পাওয়া সম্ভব। এর মধ্যে কয়েকটি হলো- শরীর সুস্থ্য রাখে। বাদামে থাকা উচ্চ পরিমাণ ফ্যাট এবং শর্করা বেশ উপকারক আমাদের শরীরের জন্য। ছোলা এবং বাদাম খাওয়ার উপকারিতা যৌথভাবে একটি কৃত্রিম ঔষধ থেকেও ভালো গুণ সম্পূর্ণ হয়ে থাকে। মহিলাদের ক্ষেত্রে কোলন ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা হ্রাস করে বাদাম এবং কাচা ছোলা। এছাড়াও এগুলোতে থাকা ভিটামিন ডি আমাদের শরীরের হাঁড়কে শক্ত করতে ভূমিকা রাখে। শিশুদের রিকেটস রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে আনে।
মধু ও ছোলার উপকারিতা
মধু এমনিতে প্রাকৃতিক একটি ঔষধ। মধুর রয়েছে নানা উপকারিতা এবং পাশাপাশি রয়েছে ছোলারও। মধু ও ছোলা একত্রে খেলে পাওয়া যায় দ্ধিগুণ সুবিধা বা উপকারিতা। যেমন কেউ যদি কাচা ছোলার সাথে মধু মিক্স বা মিশিয়ে খায় তাহলে সে পেতে পারে বহুমুখী উপকারিতা। উদাহরণসরূপ- ভিটামিন-বি পাওয়া সম্ভব। এছাড়াও যৌন শক্তি বাড়াতে মধু ও ছোলার রয়েছে বেশ তাৎপর্য। ছোলাতে থাকা শক্তি এবং মধুতে থাকা শক্তি শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করে পাশাপাশি এগুলো এক সাথে খেলে যে উপকারিতাটা পাওয়া যায়, তা হলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়।
ছোলার ক্ষতিকর দিক বা অপকারিতা
অতিরিক্ত সব কিছুই আমাদের দেহের জন্য অনেক খারাপ। তেমনি অতিরিক্ত ছোলা খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা তেল,মশলা দিয়ে রান্না করা ছোলা আমাদের শরীরের ওজন বৃদ্ধি করতে পারে। তাই যাদের শরীরের ওজন বেশি, তারা বেশি ছোলা খাওয়া থেকে দূরে থাকুন। হজম শক্তি কম থাকলে কাচা ছোলা খাওয়া থেকে দূরে থাকতে হবে। যাদের কিডনিতে সমস্যা রয়েছে তারা ছোলা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। যাদের ডায়ালাইসিস চলছে, তারা ছোলা সম্পূর্ণভাবে খাওয়া বাদ দিয়ে দিন। অতিরিক্ত ছোলা খেলে পাতলা পায়খানা হতে পারে। মূলত এগুলোই হলো ছোলা খাওয়ার অপকারিতা বা ছোলার ক্ষতিকর দিক।
ছোলার ক্ষতিকর দিকগুলো লিস্ট আকারেও প্রকাশ করা যায় যদিও ততো বেশি বড় একটা লিস্ট হবে না। কেননা ছোলার ক্ষতিকর দিক হতে উপকারিতাই বেশি। তারপরও একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা দেওয়া হলো পড়া এবং বোঝার সুবিধার্থে।
ছোলার ক্ষতিকর দিক হলো–
- শরীরের ওজন বৃদ্ধি করতে পারে।
- হজম শক্তির ঘাটতি তৈরি করতে পারে।
- কিনডনির কিছু সমস্যা তৈরি করতে পারে
- পাতলা পায়খাান হতে পারে।
- গ্যাস্ট্রিক বাড়তে পারে।
- বমি ভাব তৈরি করতে পারে সহ আরো অনেকগুলো ক্ষতিকর দিক রয়েছে ছোলার।
যদি আমরা সামগ্রিকভাবে চিন্তা করি, তাহলে দেখতে পাবো যে ছোলার ক্ষতিকর দিকের চেয়ে অনেক গুণ এগিয়ে আছে ছোলার উপকারিতার দিকগুলো। তারপরও, ভুক্তভোগীদের জানার জ্ঞাতে এই তথ্যগুলো তুলে ধরা। এখন থেকে আশা করি ছোলা খাওয়ার পূর্বেই ছোলার ক্ষতিকর দিকগুলো বিবেচনা রাখবেন।
সরিষা তেলের স্বাস্থ্য উপকারিতা
উক্ত আর্টিকেলে আমরা জানলাম ছোলার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে। এছাড়াও জানলাম ছোলা কীভাবে খাবো বা কী পরিমাণে খাবে তার সম্পূর্ণ ডিটেইলস সহ। ছোলার ক্ষতিকর দিকগুলো জানা হলো। সুতরাং উপরোক্ত ব্যাখ্যাগুলো বোঝার মাধ্যমে আমরাও পেতে পারি ছোলার পুষ্টিগুণ এবং উপকারিতাগুলো।