বর্তমান বিশ্বে ডায়াবেটিস কমানোর উপায় নিয়ে ইন্টারনেটে প্রচুর সার্চ হচ্ছে। আর হবেই না বা কেন? সারা বিশ্বে লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রতিনিয়ত ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। আর তাদের উদাসীনতা এবং অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস ও বদঅভ্যাসের কারণে ডায়বেটিস বেড়ে অনেক হয়ে যায়। আর এই কারণে বেশিরভাগ সময়েই ডায়বেটিস রোগীদের অন্ধত্ব, কিডনি ফেইলর,হৃদরোগ, হার্টে সমস্যা, পেশার বৃদ্ধি পাওয়া ইত্যাদির মতো কঠিন রোগে পতিত হওয়ার সম্ভবণা বৃদ্ধি পায়।
মূলত ডায়াবেটিস হলো এক ধরনের মেটাবলিক রোগ। আর যখন কারো শরীরে ডায়াবেটিস হয়, তখন তার শরীরে প্রয়োজনের তুলনায় এবং পূর্বের তুলনায় গ্লুকোজ ও সুগারের পরিমাণ অনেকটা বেশি বেড়ে যায়। আর এটাকেই মূলত আমরা ডায়াবেটিস বলে থাকি।
এখন ডায়াবেটিস কমানোর উপায় গুলো সম্পর্কে জানবো। মূলত ডায়াবেটিসের অনেক টাইপ রয়েছে। এগুলো হলো-
- টাইপ ১ ডায়াবেটিস
- টাইপ ২ ডায়াবেটিস
- টাইপ ৩ ডায়াবেটিস
সবগুলো টাইপের ডায়াবেটিস কিন্তু চাইলেই আমরা কমিয়ে রাখতে পারি। সামান্য কিছু নিয়ম কানুন আর খাদ্য অভ্যাসে এবং চলাচলে কিছু পরিবর্তন আনলে খুব সহজেই ডায়াবেটিস কমানো যায়।
ডায়াবেটিস হওয়ার শুরুতে মূলত অনেক রকম দৈহিক সমস্যা দেখা দেয় আবার ডায়াবেটিস হওয়ার পরও অনেক রকম শারিরিক সমস্যা দেখা দেয়।
ডায়াবেটিস রোগের লক্ষণ গুলো
- স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি এবং ঘন ঘন প্রসাবের বেগ হওয়া
- স্বাভাবিকের চেয়ে ক্ষুধা বৃদ্ধি পাওয়া
- মিষ্টি জাতীয় খাদ্যের প্রতি অত্যধিত আকর্ষণ বৃদ্ধি পাওয়া
- পুরো শরীর দুর্বল দুর্বল অনুভব করা
- শরীরে কোনো কারনে কেটে গেলে ক্ষত সারতে অনেক সময় লাগা
- দেহের চামড়ায় চুলকানি ভাব বা খসখসানির ভাব তৈরি হওয়া
- কোনো রকম কারণ ছাড়াই মেজাজ খিটখিটে হওয়া
- ধীরে ধীরে ওজন হ্রাস পাওয়া
- চোখে কম দেখা
এছাড়াও আরো অনেক সমস্যা আছে যেগুলো ডায়াবেটিস হলে এ সমস্যা হয়। তবে আশা করি এখন আর কেউ সার্চ করবেন না যে ডায়াবেটিস হলে কি কি সমস্যা হয়।
সাধারণত রক্তে গ্লুকোজ এবং সুগারের পরিমাণ বেড়ে গেলেই ডায়াবেটিস বেড়ে যায়। অর্থাৎ এ উপাদানগুলো ডায়াবেটিস কে প্রভাবিত করে। ব্যক্তি হারে এবং বয়স হারে ডায়াবেটিস হার রুপ ধারণ করে।
আমেরিকার ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশনের গাইডলাইন অনুযায়ী রক্তে এইচবিএ১সির মান ৫.৭ এর নিচে থাকলে, তাকে নরমাল বা স্বাভাবিক বলে ধরে নেওয়া হয়। কিন্তু কারো ক্ষেত্রে ৬.৫ এর বেশি হয়,তাহলে তার ডায়াবেটিস আছে বলে শনাক্ত করা হবে।
তাহলে বুঝা গেল, ডায়াবেটিস এর মাত্রা ৫.৭ এর নিচে হলে তা নরমাল এবং তা যদি কোনো কারণে ৬.৫ এর উপরে চলে যায় তাহলে তা তীব্র রুপ ধারণ করছে।
ডায়াবেটিস সারানোর উপায়
কারো যদি ডায়াবেটিস হয়ে যায়, তাহলে তাকে তাঁর দৈনন্দিন জীবনের রুটিনে কয়েকটি পরিবর্তন আনতে হবে। যেহেতু ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হয়ে গেছেন সেহেতু এ মূহর্তে আপনার আর কিছুই করার নেই। সবচেয়ে দূর্ভাগ্যের বিষয় হলো ডায়াবেটিস কখনো পুরোপুরি ভালো হয় না। তবে বিশ্বে ডায়াবেটিস নিরাময় বা সারানোর জন্য অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাচ্ছে। এসব পরীক্ষার মাধ্যমে কয়েকটি পরীক্ষিত উপায় রয়েছে, যেগুলো নিয়মিত কেউ মেনে চললে আজীবন কারো ডায়াবেটিস হবে না যদি না তাদের বংশীয়ভাবে কারো পূর্ব থেকে ডায়াবেটিস রোগ থাকে।
ডায়াবেটিস সারানোর কিছু উপায়-
- স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা
- নিয়মিত সালাদ খাওয়া
- শাক-সবজি খাওয়া
- প্রচুর হাঁটাহাঁটি করা
- পূর্ণ শস্য জাতীয় খাবার খান
- সকল ধরনের ফাস্টফুড এড়িয়ে চলুন
- সকল প্রকার মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকার চেষ্টা করুন
- সর্বশেষ ধূমপান ত্যাগ করুন
ডায়াবেটিস চিকিৎসায় নতুন উপায়
সাধারণত ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলো দেখা দিলেই ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া সবার উচিত। খাওয়ার ঔষধ এবং ইনজেকসানের মাধ্যমে ডায়াবেটিস রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়।
দিন দিন ডায়াবেটিসের নতুন নতুন চিকিৎসা আসছে। বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত ডায়াবেটিস নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করছে। তারই ধারাবাহিকতায় বের হয়ে আসছে চিকিৎসার নতুন নতুন ধাপ এবং নতুন নতুন পদ্ধতি।
তবে শেষ কথা হিসেবে বলতে চাই যদি কোনো কারণে ডায়াবেটিস এর লক্ষণগুলো দেখা দেয়, তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে গিয়ে ভালো চিকিৎসা নিতে হবে।
প্রাকৃতিক উপায়ে ডায়াবেটিস চিকিৎসা
ডায়াবেটিস হলেই অনেকে মনে ধারণা করে আজ থেকে প্রতিনিয়ত ঔষধ খেতে হবে এবং তার উপর বেঁচে থাকতে হবে। কিন্তু এটা পুরোটাই একটা ভুল ধারণা। কেননা শুধু মাত্র ঔষধ বা ইনসুলিন দ্ধারাই ডায়াবেটিস এর চিকিৎসা নেওয়া যায় না, পাশাপাশি প্রাকৃতিক উপায়ে ডায়াবেটিস চিকিৎসা নেওয়ারও পদ্ধতি বা উপায় বের হয়েছে।
আর এগুলো হলো-
- সু-নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপনের মাধ্যমে
- প্রতিদিনের ব্যায়ামের মাধ্যমে
- সঠিক খাদ্যভ্যাসের মাধ্যমে
উপরোক্ত এই উপায়গুলোর মাধ্যমে একজন ডায়াবেটিস রোগী প্রাকৃতিক উপায়ে ডায়াবেটিস চিকিৎসা নিতে পারে।
ডায়াবেটিস চিরতরে নিরাময় হবে
প্রতি বছর লাখ লাখ মানুষ ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হচ্ছে । এ আক্রান্ত থেকে প্রতি বছর ১০ লাখের উপর ডায়াবেটিস রোগী মূত্যুবরণ করে। এখন এমন ভয়ানক একটা অবস্থা হতে যদি রেহাই পেতে চায় চিরতরে, তাহলে যে জিনিসটা করতে হবে, তা হলো ”ডায়েট করা এবং সেটা ধরে রাখা”।
ডায়াবেটিস হওয়ার পর বা হওয়ার আগে কেউ যদি ডায়েট করে এবং তা ধরে রাখে তাহলে তার ডায়াবেটিস চিরতরে নিরাময় হবে।
ডায়াবেটিস রোগীর খাবার তালিকা
একজন ডায়াবেটিস রোগীকে অন্য একজন স্বাভাবিক মানুষের চেয়ে বেশি সচেতন থাকতে হয় তার দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটা কাজে। একজন ডায়াবেটিস রোগীকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে অন্যদের মতো স্বাভাবিক জীবন যাপন তার জন্য নয়, আর এ শৃঙ্খলাই তাকে অন্যদের থেকে বেশি সুস্থ্য রাখে ।
ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা কে সুবিধা অনুযায়ী ৬ ভাগে ভাগ করি-
- সকালের খাবার
- মধ্য সকালের খাবার
- দুপুরের খাবার
- বিকালের নাস্তা
- রাতের খাবার
- শোবার আগের খাবার
সকালের খাবার: সকালের খাওয়াটা যেন অবশ্য সকাল ৭ টা থেকে ৮ টার আগেই সেরে ফেলতে হবে। আর যদি কোনো কারনে তা বিলম্ব হয় তাহলে যেন ৯ টার আগেই খেয়ে ফেলে সকালের খাবার।
আর সকালের খাবারে রাখতে পারে রটি-মুড়ি-চিড়া- খই আর সাথে একটু নিরামিষ চাইলে সামান্য মধুও। মধুতে রয়েছে অনেক উপকার। যদি সম্ভব হয় তাহলে একটি ডিমও খেতে পারেন।
মধ্য সকালের খাবার: এটা সকাল ১০ টা থেকে ১১ টার মধ্যে খেয়ে ফেলতে হবে। মধ্য সকালের খাবারে আপনার ইচ্চা অনুযায়ী যেকোনো একটা ফল খেতে পারেন তবে অত্যাধিক মিষ্টি জাতীয় ফল এড়িয়ে চলাই ভালো।
দুপুরের খাবার: ডায়াবেটিস রোগীরা দুপুরের খাবারে ভাত রাখতে পারেন। আধা প্লেট বা এর সামান্য কম ভাত নিন এবং ভাতের সাথে মাছ/মুরগির মাংস, শাকসবজি, সালাদ বা লেবু রাখতে পারেন। তবে অবশ্যই মনে রাখবেন, আপনার খাবার প্লেটকে ৩ ভাগ করবেন। এক ভাগ ভাত, অন্য এক ভাগ মাছ বা মাংস, সালাদ আর তৃতীয় ভাগটাতে শাকসবজি রাখবেন।
বিকালের নাস্তা: বিকালের নাস্তায় হালকা খাবার রাখতে পারেন। যেমন বিস্কিট কিন্তু চিনি ছাড়া, মিষ্টি ছাড়া পিঠা, বাদাম বা রং চা অথবা মুড়ি খাওয়া যেতে পারে।
রাতের খাবার: রাতের খাবারটা অবশ্যই ৮টা থেকে ৯ টার আগেই খেয়ে ফেলতে হবে অথবা শোয়ার ২-৩ ঘন্টা আগে খেতে হবে। রাতের খাবারেও দুপুরের খাবারের মতো ভাত অথবা রুটি রাখতে পারেন সাথে মাছ মাংস পরিমাণ অনুযায়ী রাখতে পারেন, সাথে লেবু বা সালাদও রাখতে পারেন।
শোয়ার আগের খাবার: রাতে শোয়ার ১ ঘন্টা আগেই এক গ্লাস খাঁটি দুধ খেয়ে নিবেন। আর যদি দুধে আপনার অন্য সমস্যা থাকে তাহলে দই বা পনির খেয়ে নিতে পারেন পরিমাণ মতো।
যেসব খাবার খাওয়া উচিত নয় বা এড়িয়ে চলা উচিত ডায়াবেটিস রোগীদের
- অত্যাধিক মিষ্টি জাতীয় খাবারগুলো
- ডুবোতেলে ভাজা খাবারগুলো না খাওয়াই উত্তম
- তৈলাক্ত খাবার বা অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার এড়িয়ে চলতে হবে
- সকল প্রকার চর্বি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে যেমন – ঘি
- গরু, খাসি, হাঁস-মুরগির এবং পাখির মাংস এড়িয়ে চলতে হবে সর্বদা
- সব রকম তেল এবং কি সরিষা জাতীয় তেলও এড়িয়ে চলবে
মূল কথা: যেহেতু ডায়াবেটিস রোগটি এখন ছোট বড় সবারই হচ্ছে, তাই এটাকে ছোট রোগ ভেবে অবহেলা করা বা এর প্রতি উদাসীন হওয়া আমাদের উচিত নয়। তবে উপরের উল্লেখিত কিছু সহজ নিয়ম কানুন মেনে নেওয়ার মাধ্যমে ডায়াবেটিস রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারি অথবা ডায়াবেটিস কমানোর উপায় গুলো ফলো করতে পারি।
আজকের নগদ অফারগুলো দেখতে ভিজিট করুণ
আজকের বিকাশ অফারগুলো দেখতে ভিজিট করুণ