বর্তামান পৃথিবীতে ডায়েবেটিস একটি পরিচিত রোগ। আজকের আর্টিকেলে ডায়াবেটিস রোগীদের স্বাস্থ্যসম্মত Diet Chart নিয়ে আলোচনা করবো এবং এছাড়াও ডায়াবেটিস রোগীদের কোন খাবারগুলো খাওয়া উচিত নয় এবং কোন খাবারগুলো খাওয়া উচিত তা নিয়েও আলোচনা করবো।
ডায়াবেটিস এর সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো রোগী কী খাবেন আর কী খাবেন না তা নিয়ে দিনরাত বিবেচনা করা। এক কথায় এই প্রশ্নের উত্তর হলো রোগী সেসব খাবার না খাওয়াই উত্তম যেসব খাবার রোগীর রক্তে Sugar বাড়িয়ে দেয়। রোগীর রক্তে Sugar বাড়লে রোগীর অন্যান্য অঙ্গেও এর প্রভাব পড়ে। অনিয়ন্ত্রিত ব্লাস সুগার থেকে চোখ, স্নায়ু ও হার্টের সমস্যা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা থাকে। এই কারণেই খাদ্য নির্বাচণে সতর্ক হওয়া উচিত। ডায়াবেটিস রোগীকে সচেতন হতে হবে গৃহীত খাদ্যের পরিমাণ নিয়ে।কারণ আমরা খাদ্য খাই energy পাওয়ার জন্য। খাদ্য থেকে পাওয়া এই এনার্জির একক হলো ক্যালোরি। এই ক্যালরি দরকার পরে কাজ করার জন্য।এখন সব মানুষের একই ধরনের ক্যালরি দরকার পরে না।কারণ আমরা সবাই একই রকম কাজ করি না। কেউ মাঠে সারাদিন লাঙ্গল দিয়ে কাজ করেন আবার কেউ সারাদিন অফিসে কম্পিউটার ডেস্কে কম্পিউটার ব্যবহার করেন। অর্থাৎ শারীরিক পরিশ্রমের ক্ষেত্রে দু’জনের ক্ষেত্র এক নয়। যিনি চাষ করেন তাকে অনেক বেশী পরিশ্রম রকতে হয়, তাই তার ক্যালরি বেশি লাগে এবং খাদ্যের পরিমাণও বেশি হয়। আর যিনি ডেস্কে বসে কম্পিউটার ব্যবহার করেন, শারীরিক পরিশ্রম কম, ক্যালরিও কম লাগে তাই খাদ্যের পরিমাণও কম লাগে।
এখন একজন চাষী যে পরিমাণ খাদ্য খান, সে পরিমাণ খাদ্য অফিসে কাজ কর লোকটা খাওয়া শুরু করলে মুশকিল হয়ে যাবে।কারণ তার দেহে প্রচুর ক্যালরি জমে যাবে কিন্তু খরচ হবে না। খরচ না হলে সেই ক্যালরি ফ্যাট হিসেবে জমে যাবে।খেয়াল করলে দেখা যাবে Type-02 ডাইবেটিস রোগীর দৈহিক ওজন বেশি হয়। তাই Type-02 আক্রান্ত রোগীদের ওজন নিয়ন্ত্রণ করা খুবই জরুরি। ওজন নিয়ন্ত্রণ না করলে ডাইবেটিস রোগীর দেহে সুগারের পরিমাণ খুবই বেশি বেড়ে যাবে। তাই ওজন কমাতেই হবে এবং সুগারের পরিমাণও কমাতে হবে।
ডায়াবেটিস রোগীর জন্য নিষিদ্ধ খাদ্য তালিকা
যখনই একজন ডায়াবেটিস রোগ দ্ধারা আক্রান্ত হয়, ঠিক তখনই ডায়াবেটিস রোগীরা তাদের মন মতো কোনো খাদ্যই খেতে পারে না। তাদের জন্য বেশ কয়েকটি নির্দিষ্ট খাদ্য রয়েছে, যেগুলো তাদের জন্য নিষিদ্ধ। তাই আজকের এই পর্বে আমরা জানবো ডায়াবেটিস রোগীর জন্য নিষিদ্ধ খাদ্যগুলো। চলুন তাহলে জানা যাক ডায়াবেটিস রোগী জন্য নিষিদ্ধ খাদ্য গুলো সম্পর্কে।
সাধারণত সরল-শর্করা জাতীয় খাদ্যগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। খাবারগুলোর চাট দেওয়া হলো
- চিনি
- গুড়
- মধু
- মিষ্টি
- ফলের রস
- কোল্ড ড্রিংকস
- আইসক্রিম
এই ধরনের খাবার খুব অল্প মাত্রায় খেলেও খুব দ্রুত রক্তে সুগারের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এছাড়াও প্রচুর ক্যালরি থাকে এই ধরনের খাদ্যে।
অতিরিক্ত ফ্যাট জাতীয় খাদ্য খাওয়া বন্ধ করতে হবে। উদাহরণসরূপ বলা যেতে পারে
- ঘি
- মাখন
- মার্জারিন
- চিজ
- পেষ্ট্রি
তেলে ভাজা যেকোনো খাবার নিয়ন্ত্রণ করতেই হবে। কারণ এই টাইপের খাদ্য রক্তে টাইগ্লিসারাইডসের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফলে হৃদরোগ ও স্টোকের আশঙ্কা দেখা দেয়। এছাড়া ছেড়ে দিতে হবে ঐসব খাদ্যগুলো যেগুলোতে মাত্র অতিরিক্ত ক্যালরি থাকে।
ময়দা জাতীয় খাদ্যও বন্ধ করতে হবে। কারণ ময়দায় ফাইবার থাকে না। ফলে ময়দার তৈরি লুচি বা পাউরুটি খেলে শুধু দেহে অতিরিক্ত ক্যালরি প্রবেশ করে। কোনো রকম খাদ্যগুণ মিলে না। এখানেই শেষ না। অ্যালকোহল এবং পকেট জাত খাদ্যদ্রব্য পরিহার করতেই হবে।
ডাইবেটিস আক্রান্ত রোগীর খাদ্য তালিকা
সাধারণত ডায়াবেটিস রোগীরা স্বাভাবিক মানুষের মতো খাওয়া দাওয়া করতে পারে না। কিছু ক্ষেত্রে তাদের খাদ্যে নিষেদ্ধাজ্ঞা রয়েছে। যা উপরের চার্ট আকারে সেসব খাদ্যগুলো প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু এখন আমরা জানবো একজন ডায়াবেটিস রোগী তার খাদ্য তালিকায় কী কী খাদ্য রাখবে। অর্থাৎ কী কী খাদ্যগুলো খেতে পারবে। তাই নিম্নে বেশ কতগুলো খাদ্য উল্লেখ করা হয়েছে। যেগুলো একজন ডায়াবেটিস রোগী তাঁর খাদ্য তালিকায় রাখতে পারে। সুতরাং চলুন জানা যাক ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকাগুলো। ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য তালিকা হলো-
- যেকোনো ধরনের শাকসবজি
- পরিমাণ মতো ভাত বা রুটি
- যে কোনো রকমের ডাল
- ডিমের সাদা অংশ
- পরিমাণ মতো চিকেন।
- যে কোন রকমের মাছ
- ডাবল টোনড দুধ পান করতে পারেন।
- ডাবল টোনড দুধের দই
- ওটস খাওয়া যাবে
- ডালিয়ার খিচুড়ি সবজি দিয়ে
এছাড়াও রক্তে সুগারের পরিমাণ কম থাকলে সপ্তাহে ২দিন ৫০গ্রাম পরিমাণ আলু খেতে পারেন। এর বেশি নয়। কারণ আলু তে প্রচুর পরিমাণ ক্যালরি থাকে। মাসে ১-২ বার ২৫গ্রাম ওজনের মাটন খেতে পারেন।
এখন অনেকেরে মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে, ডাইবেটিস হয়েছে বলে কী বিয়ে বাড়িতে নিমন্ত্রণ খেতে পারবেন না?
নিশ্চয় পারবেন। তবে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার বেশি নিবেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বিয়ে বাড়িতে পোলাও, সাদা-ভাত আছে বলে দুইটিই নিতে হবে এমনটা কিন্তু নয়। যেকোনো একটি আইটেম নিন। বাকিগুলো নেওয়া নিষেধ। একটুকরো মাটন নিতে পারেন। তবে সালাদ খান বেশি করে। এতে করে খিদেও মিটবে, ভালো লাগবে এবং শরীরও ভালো থাকবে।
ডাইবেটিস রোগীদের ক্ষুধা পায় বেশি বেশি। সে ক্ষেত্রে ক্ষিধে মিটাতে সালাদ খুব কাজে দেয়। সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকলে সেক্ষেত্রে মাসে একবার বিরিয়ানিও খেতে পারেন।
আপনি পরিমাণ মতো ভাত বা রুটি খেতে পারেন। কারণ দুটি খাদ্যেই সম-পরিমাণ ক্যালরি থাকে।
ডায়াবেটিস রোগীর ব্যায়াম
ডায়াবেটিস কমানোর ঘরোয়া এবং প্রাকৃতিক উপায়
এখন জানবো ডাইবেটিস আক্রান্ত রোগীরা কী ফল খেতে পারে? আর যদি পারেন তাহলে কোনগুলো খেতে পারেন এবং কোনগুলো খেতে পারেন না?
কিছু কিছু ফল থাকে , যেগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি থাকে। সে ধরনের ফলগুলো এড়িয়ে চলাই ভালো।
- আম
- কলা
খুব ভালো হয় নিম্নের ফলগুলো খেলে
- আপেল
- কমলালেবু
- পেয়ারা
- পেপে
তাই বলে কী আম কলা একেবারেই খেতে পারে না?
অবশ্যই খাওয়া যাবে। আম খেলে এক টুকরো খান এবং কলা খেলে সপ্তাহে ১টি খান। আর একটা কথা বলা উচিত, ফলের রস খাওয়া যাবে না ডাইবেটিস রোগীদের। ফলের রসে কোনো রকম ফাইবার থাকে না শুধু মাত্র প্রচুরপরিমাণে ক্যালরি থাকে তাই এটা না খাওয়াই উত্তম।
শুধু ডায়েট করলেই হবে না। প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট করে হাটতে হবে। শরীরচর্চা শরীরের জন্য খুবই দরকার এবং এটি ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে। তবে গর্ভবর্তী মায়েদের খাদ্যগুলো একটু আলাদা হবে।