আজ আমরা আলোচনা করব তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। আমাদের দেশে তরমুজ খুবই জনপ্রিয় একটা ফল। এবং অধিকাংশ মানুষের কাছে তরমুজ খুবই জনপ্রিয়। ফলে তরমুজের এই জনপ্রিয়তার কারণে আমাদের দেশের তরমুজ উৎপাদন দিন দিন বৃদ্ধ পাচ্ছে। তরমুজ আমাদের খাদ্য তালিকা মধ্যে অন্যতম একটা পছন্দের খাবার। ছোট থেকে বড় প্রত্যেকের কাছে তরমুজ একটা পছন্দের ফল। কিন্তু আমরা অনেকেই জানিনা তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। আমাদের দেশে তরমুজ উৎপাদনের সময় সাধারণত গ্রীষ্মকাল। এই গ্রীষ্মকালে প্রচন্ড গরম থাকায় মানুষ তরমুজ খেতে খুব পছন্দ করে।
কেননা তরমুজের ভিতরে রয়েছে সুস্বাদু এক ধরনের পানীয় জাতীয় খাবার যা আমাদের সহজে পানি তৃষ্ণা মিটিয়ে থাকে। তরমুজ বিশেষ করে বয়স্ক মানুষদের জন্য খুবই পছন্দের একটা ফল। আমাদের দেশে পঞ্চগড়ে সবচেয়ে বেশি তরমুজ উৎপাদিত হয়ে থাকে। দিন দিন এই তরমুজের চাহিদা বৃদ্ধির পাশাপাশি দামও বৃদ্ধি পেতে আছে। সুতরাং আমরা এখন এই জনপ্রিয় ফল তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনার মাধ্যমে আপনাদের জানাবো যে তরমুজের কি কি উপকার আছে কি কি ক্ষতি হতে পারে বা কি কি অপকারিতা আছে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। নিচে তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতা উল্লেখিত করা হলো।
তরমুজের উপকারিতা
এই তরমুজের ভিতরে অসংখ্য উপকারিতা আছে, এবং সে উপকারিতা গুলো আমরা এখন নিচে আপনাদের কাছে তুলে ধরব।
হার্টকে সুস্থ রাখে
তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতা গুলোর মধ্যে অন্যতম একটা গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা হলো হার্ট সুস্থ রাখে। একটা জরিপে দেখা গেছে, তরমুজ খাওয়ার ফলে হার্টের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পায়। এবং তরমুজ এ রয়েছে ভিটামিন সি, ক্যারোটিন ও পটাশিয়াম যা শরীরের কোলেস্টেরল কমাতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যার ফলে আপনার হার্ট বড় ধরনের বিপদ বা সমস্যার চোখে থেকে সুরক্ষিত থাকবে।
কিন্তু অনেকে হয়তো ভেবে থাকে যাদের হার্টের সমস্যা আছে, তারা হয়তো তরমুজ খেলে হার্টের সমস্যা ভালো হয়ে যাবে। কিন্তু এধরনের ভাবনা ভাবতে ভুল হবে কেননা চাঁদে হাটের সমস্যা আছে তারা চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
তরমুজ ত্বক সুস্থ রাখে
নিয়মিত তরমুজ খেলে আপনার ত্বক সুস্থ থাকবে। অনেক বিশেষজ্ঞদের মতে, তরমুজের যে ভিটামিন এ আছে তা আপনার মুখের ত্বকের মৃত কোষগুলোকে পুনরুদ্ধারের সহায়তা করে। ফলে আপনার মুখের লাবণ্যতা ফিরে আসে। এছাড়াও আপনার মুখে যদি মেচতা থাকে, সেই মেচতা দূর করতেও তরমুজ খুবই উপকারী। আর এটা তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতা গুলোর মধ্যে অন্যতম একটা উপকারিতা।
তরমুজ দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করে
তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতা গুলোর মধ্যে আর একটা উপকার হলো দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে। তরমুজের বেশি ভিটামিন-এ, যা আমাদের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ভিটামিন-এ এর অভাবে রাতকানা রোগ হয়ে থাকে। সুতরাং তরমুজে ভিটামিন এ থাকায় আমাদের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং রাতকানা রোগ থেকে দূরে রাখে।
তরমুজ হাড় গঠন বা সুস্থ রাখতে
বর্তমানে মানুষের অন্যতম একটা সমস্যা দেখা দিচ্ছে হাড়ের সমস্যা। এছাড়াও বয়স্ক হলে মানুষের উন্নত একটা সমস্যা হলো হাড়ের সমস্যা। এ সময় মানুষের হাড়ে বিভিন্ন ধরনের ক্যালসিয়ামের চাহিদা দেখা দেয়। আপনি যদি নিয়মিত হাটাহাটি করেন এবং এর পাশাপাশি নিয়মিত খাদ্য তালিকায় তরমুজ রাখেন তাহলে আপনার হাড় মজবুত এবং সুস্থ রাখতে সহায়তা করবে। কেননা তরমুজ রয়েছে ভিটামিন-এ এবং প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম। আর এটাও তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতা গুলোর মধ্যে অন্যতম একটা উপকার।
তরমুজ কিডনি সুস্থ রাখতে
তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতা গুলোর মধ্যে আর একটা গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা হলো নিয়মিত তরমুজ খেলে কিডনি সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। বর্তমানে অনেকে কিডনির বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। অনেকের কিডনিতে পাথর পড়ে থাকে এবং প্রস্রাবের সমস্যার কারণে কিডনিতে ও বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। কিডনিতে পাথর পড়লে প্রচন্ড ব্যথা সৃষ্টি হয়। অনেকেই এই ব্যথার সহ্য করতে পারে না।
আপনি নিয়মিত তরমুজ খেলে কিডনির বিভিন্ন সমস্যা থেকে রক্ষা পাবেন এমনটা নয়। তরমুজের রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, ক্যালসিয়াম। যা আপনার কিডনির উপর থেকে চাপ কমাতে সহায়তা করবে। এবং নিয়মিত তরমুজ খাওয়ার ফলে প্রস্রাবের ধারাবাহিকতা সচল থাকে। এতে আপনার কিডনির উপর থেকে চাপ কমানোর পাশাপাশি কিডনিতে পাথর রোগের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমিয়ে থাকে।
রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখত
আমাদের সমাজে দেখা যায় অনেকেই উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। তারা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে থাকে। অনেক চিকিৎসকেরা বলেছেন নিয়মিত খাদ্য তালিকায় তরমুজ রাখার চেষ্টা করুন। কারণ তরমুজ রয়েছে প্রচুর পরিমানে পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম যা আপনার উচ্চ রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করবে। এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করব। আর এটাও তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতা গুলোর মধ্যে একটা গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা।
তরমুজ প্রস্ট্রেটের ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে
তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতা গুলোর মধ্যে এটা হল আরেকটা উপকারিতা। নিয়মিত তরমুজ খাওয়ার ফলে প্রোস্টেটের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। তবে সে ক্ষেত্রে আপনাকে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
এজমা প্রতিরোধের সহায়তা করে থাকে
তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতা গুলোর মধ্যে আর একটা মূল্যবান উপকারিতা হলো, তরমুজ এজমা প্রতিরোধের সহায়তা করে থাকে। আপনি যদি নিয়মিত তরমুজ খেয়ে থাকেন তাহলে অ্যাজমা হওয়ার ঝুঁকি থেকে আপনি অনেকটা রক্ষা পাবেন। তরমুজের প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। যা আপনাকে এজমা বা হাঁপানি থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করবে। এছাড়াও তরমুজ আপনার ফুসফুস সুস্থ রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
এখন আমরা জেনে নেব তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতা গুলোর মধ্যে অপকারিতা সম্পর্কে।
তরমুজের আরও কিছু উপকারিতা – তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতা
- তরমুজে কিছু অপকারিতাও রয়েছে। তাহলে আসুন নিচে আলোচনা করা যাক।
- অতিরিক্ত তরমুজ খাওয়ার ফলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে, যেমন পাতলা পায়খানায়, গ্যাস, পেট ফাঁপা ইত্যাদি
- তরমুজের হয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম যা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে খুবই উপকারী হিসেবে কাজ করে। তবে অধিকাংশ ডাক্তাররা বলেছেন অতিরিক্ত তরমুজ খাওয়ার ফলে কার্ডিওভাসকুলার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- যারা অ্যালকোহল পান করে থাকেন তাদের জন্য একটা সমস্যা হচ্ছে। তারা যদি তোর মত বেশি পরিমাণে খায় তাহলে লিভারের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- তরমুজে পানির পরিমাণ রয়েছে ৯২% । বেশি পরিবারে তরমুজ খেলে শরীরের পানির পরিমাণ বেড়ে যাবে, ফলে রক্তের সোডিয়াম লেভেলের পরিমাণ কমে যাবে। এবং সোডিয়াম লেভেল কমে গেলে শরীর দুর্বল লাগতে পারে, কিডনিতেও সমস্যা হতে পারে, হাত পা ফুলে যেতে পারে। তাই অতিরিক্ত তরমুজ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
- এছাড়াও প্রতিদিন অতিরিক্ত তরমুজ খাওয়ার ফলে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা ও বেড়ে যেতে পারে।
অনেক বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, অতিরিক্ত তরমুজ খাওয়ার ফলে শরীরের জলীয় উপাদান বেড়ে যায়। আর শরীরের জলীয় উপাদান বেড়ে গেলে ওভার-হাইড্রেশন ও বেড়ে যায়। যার ফলে কিডনিতে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
সুতরাং এই বিষয়গুলো হলো তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতা গুলোর মধ্যে অপকারিতা।
কিডনি রোগী কি তরমুজ খেতে পারবে
কিডনিতে সমস্যা হলে রক্ত থেকে পটাশিয়াম ঠিকমতো নিষ্কাশন করতে পারে না। যাদের এই প্রবণতা আছে তারা উচ্চ পটাশিয়ামযুক্ত ফলমূল খাওয়া থেকে বিরত থাকবে। যেমন তরমুজ, কলা, ডাব, টমেটো, কিসমিস ইত্যাদি। কিডনি রোগী কি তরমুজ খেতে পারবে কি না প্রশ্ন করা ভাই-বোনেরা দেখে নিতে পারেন এই অংশ।
খালি পেটে তরমুজ খেলে কি হয়
খালি পেটে তরমুজ খেলে কি হয়ে থাকে এ বিষয়ে অনেকেই জানতে আগ্রহী। তরমুজ একটি গ্রীষ্মকালীন ফল। গরমের সময় তরমুজ খেলে পানির তৃষ্ণা মিটিয়ে থাকে। তরমুজ এই ফলটি সকালে খালি পেটে খাওয়ার খুবই ভালো। গরমকালে আমাদের শরীরে ইলেকট্রোলাইটের অভাব দেখা যায়। সকালে খালি পেটে খেলে এই ইলেকট্রোলাইটের অভাব দূর হয়। তাই বলা যায় সকালে খালি পেটে খেলে উপকার বেশি পাওয়া যাবে।
তরমুজ খেলে কি ওজন বাড়ে
অনেকেই চিন্তা করে তরমুজ খেলে কি ওজন বাড়ে? না, তরমুজ খেলে ওজন বাড়ে না। বরং তরমুজ ওজন কমাতে সাহায্য করে। বিভিন্ন গবেষণায় জানা যায়, ১০০ গ্রাম তরমুজ এ মাত্র ৩০ গ্রাম ক্যালরি থাকে। এবং এতে ৯২ শতাংশ পানি থাকে যা ওজন কমাতে সহায়তা করে। সুতরাং বলা যায় তরমুজ খেলে নতুন বাড়ে না বরং কমে।
ডায়াবেটিস রোগীরা কি তরমুজ খেতে পারবে
অনেক ডায়াবেটিসের রোগী জানতে চায়, ডায়াবেটিস রোগীরা কি তরমুজ খেতে পারবে? পারবে, তবে ডাক্তারের পরামর্শ মত খেতে হবে। খাবারের সাথে তরমুজ এবং অন্যান্য ফল যোগ করার পাশাপাশি ফ্যাট ও প্রোটিনের সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখা উচিত। চিনির শোষণকে ফ্যাট ও প্রোটিন ধীর করতে সহায়তা করেন। তাই তরমুজ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সহায়ক হতে পারে। তবে তরমুজ পরিমাণ একটু কম খেতে হবে। আর এজন্য চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
পরিশেষে
উপরে আলোচিত হয়েছে তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। আশা করি এই আলোচনার মাধ্যমে আপনারা তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।
আমাদের মাঝে অনেকেই জানতো না যে তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতা গুলোর মধ্যে কিছু উপকারিতা ও রয়েছে। এই আলোচনার মাধ্যমে অজানারা জানতে পেরেছেন তরমুজের উপকারিতা সম্পর্কে। আপনারা প্রত্যেকে অতিরিক্ত তরমুজ খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। আর এ কথা সবাই জানে যে, অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো নয়।
সুতরাং আমাদের প্রত্যেকের নিয়মিত খাদ্য তালিকায় তরমুজ রেখে উপরে উল্লেখিত উপকারিতা গুলো পেতে পারি। পাশাপাশি এটাও সতর্ক থাকতে হবে যে, অতিরিক্ত তরমুজ খাওয়ার ফলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই আমাদের অতিরিক্ত তরমুজ খাওয়া থেকে বিরত রেখে সমস্যাগুলো এড়িয়ে চলতে হবে। তাই নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, তরমুজের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে এই বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে আপনারা তরমুজ সম্পর্কে একটা পরিপূর্ণ ধারণা পেয়েছেন।