নিজ ইচ্ছার বিরুদ্ধে হঠাৎ কোনো পেশি সংকুচিত হয়ে গেলে পেশিতে খিঁচুনি তৈরি হয়। আর এই খিঁচুনিকে আমরা মাংসপেশিতে টান বলে থাকি। হাতের কিংবা কোমরের পেশীতেও টান ধরে অনেক সময়। এরপর সেই টান জটিল আকার ধারণ করে। হঠাৎই এমন সমস্যা দেখা দিতে পারে যে কারও ক্ষেত্রেই। এই ব্যথা দীর্ঘ সময় ধরে থেকে যেতে পারে। এর পেছনের মূল কারণ হলো শরীরে পানিশূন্যতা। শরীরে পানির পরিমাণ কমে গেলে শিরায় টান পড়া সমস্যা বেড়ে যায় । পায়ের মাংসপেশিতে টান লাগলে করণীয় কি তা নিয়ে আমরা খুব চিন্তায় পরে যাই।
কিছু ঘরোয়া উপায় আছে এই সমস্যা থেকে দূরে থাকার। যখন-তখন শিরায় টান পড়লে কিছু ঘরোয়া উপায়ে তা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। ঘরোয়া উপায় মেনে চলার পর সমস্যা না কমলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। তাই আসুন জেনে নেই পায়ের মাংসপেশিতে টান লাগলে এবং টান পড়লে করণীয় কী-
মাংসপেশিতে টানের কারণ (Causes muscle tension)
শিরা বা পায়ের মাংসপেশিতে টান ধরার সমস্যা খুব সাধারণ মনে হলেও এটি আসলে ততটা সাধারণ নয়। কারণ যতক্ষণ টান ধরে থাকে, ততক্ষণই যন্ত্রণা হতে থাকে। ঘুম থেকে ওঠার সময়, হাঁটার সময়, কখনো কখনো ঘুমের মধ্যে শিরায় টান ধরতে পারে। অনেক সময় হাঁটতে গিয়ে পায়ের আঙুল বেঁকে যেতে পারে। সাধারণত নিম্নোক্ত কারণে এ সমস্যা দেখা যায়-
১. স্নায়ু বা মাংসপেশিতে আঘাতের কারণে পেশিতে টান লাগে।
২. পায়ের মাংসপেশিতে টান লাগে কিছু ভিটামিনের অভাবে- বিশেষ করে ‘বি’ ভিটামিন ‘বি-১, বি-৫, বি-৬’।
৩. পানিশূন্যতাও পেশিতে টান লাগার অন্যতম কারণ থাকতে পারে ।
৪. রক্তে পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের অভাবের কারণে এই সমস্যা হয় ।
৫. ধূমপান, মদ্যপান, কিডনি ফেইলিওর,, গর্ভসঞ্চার ইত্যাদি কারণেও এই সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে ।
৬. কোনো কোনো ঔষধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার ফলাফল স্বরূপ এই পেশির টান লাগে।
৭. অনেক সময় বেশি পরিশ্রমের কারণে পেশিতে টান লাগতে পারে।
৮. গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন স্নায়ুতে অতিরিক্ত চাপ পড়ে বলে পায়ে প্রায়ই টান লাগতে পারে।
৯. পায়ের পেশির দীর্ঘ সময় ধরে অতিরিক্ত ব্যবহার এবং একভাবে দীর্ঘ সময় বসে বা দাঁড়িয়ে থাকার কারণেও টান লাগতে পারে।
১০. ধূমপায়ীদের পায়ে রক্ত চলাচল কমে যায় বলে সামান্য হাঁটাহাঁটিতেই পায়ে টান লাগে। একই কারণে ডায়াবেটিক ও কোলেস্টেরলের রোগীদেরও পায়ে ব্যথা হয়।
মাংস পেশিতে টান এড়াতে কি করবেন (What to do to avoid muscle tension)
১. যে কোনো শারীরিক কসরতের আগে বা ভারী কিছু তোলার আগে অবশ্যই ওয়ার্মআপ করে মাংসপেশি গুলোকে সচল করে নিতে হবে ।
২. নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।
৩.দীর্ঘক্ষণ এক জায়গায় না বসে, ৪০ মিনিট বা এক ঘণ্টা পর পর কয়েক মিনিট কিছুক্ষণ পায়চারি করতে হবে ।
৪. প্রচুর পানি পান করতে হবে।
পায়ের মাংসপেশিতে টান লাগলে চিকিৎসা (Treatment for leg muscle tension)
পায়ের মাংসপেশিতে টান লাগলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত । এবার জেনে নিন শিরায়টান পড়লে করণীয়:
১) হাত-পা বা কোমরে শিরায় টান পড়লে আক্রান্ত স্থান এবং তার চারপাশে আঙুলের চাপের সাহায্যে ম্যাসাজ করতে থাকুন । এমনভাবে ম্যাসাজ করুন যাতে শক্ত হয়ে যাওয়া পেশী ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে থাকে।
২) পায়ের ক্ষেত্রেও একইভাবে ম্যাসাজ করুন। এরপর আক্রান্ত স্থান কিছুটা স্বাভাবিক হলে অল্প চাপ দিয়ে ধীরে ধীরে স্ট্রেচিং করুন। এ সময় অন্য কোনো ধরনের ব্যায়াম না করাই ভালো।
যে পায়ে টান পড়েছে, সেই পায়ের হাঁটু ভেঙে বসুন। অন্য পা পেছনে টান টান করে ছড়িয়ে দিন এবং টান ধরা পায়ের হাঁটুর উপর শরীরের ভর ধীরে ধীরে ছাড়ুন।
৩) থাইয়ের পেশীতে টান লাগলে জায়গাটা নরম করে শক্ত কিছুতে ভর দিয়ে দাঁড়ান। টান ধরা পা কোমর পর্যন্ত টানটান করুন ধীরে ধীরে।
৪) হাঁটাহাঁটি করতে করতে কমতে পারে কোমর ও পায়ের শিরায় টান ধরার সমস্যা। কোমরের সমস্যার ক্ষেত্রে খুব ভালোভাবে ম্যাসাজ করলে ব্যথা দ্রুত কমতে থাকে।
৫) টান ধরা স্থানে হট ওয়াটার ব্যাগ রাখুন। ১০ সেকেন্ড রেখে সরিয়ে ফেলুন। এরপর সেখানে দিন বরফের সেঁক। এটিও ১০ সেকেন্ড পর সরিয়ে ফেলুন। আবার ১০ সেকেন্ড গরম পানির সেঁক দিন। এভাবে ১০ সেকেন্ড করে গরম ও ঠান্ডার সেঁক দিন। যতক্ষণ না আরাম পাচ্ছেন, এভাবে সেঁক দিতে থাকুন।
৬)পর্যাপ্ত পরিমাণে শাক সবজি, ফল, দুধ, মাংস এবং খেঁজুর খান । এই সকল খাবারের মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণ পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম থাকে । ফলে আপনি দীর্ঘদিন ভালো থাকতে পারবেন।
৭) কিছু অবস্থান পরিহার করুন: যেমন পা ক্রস করে বসলে পায়ের ওপর চাপ পড়ে এবং রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়। তাই এ ধরনের অবস্থানে বসা থেকে বিরত থাকুন। দীর্ঘ সময় একই ধরনের অবস্থানে না থেকে দু–এক ঘণ্টা পরপর অবস্থান বদলাতে হবে।
৮) রাতে যাঁদের বেশি ক্রাম্প বা টান হয়, তাঁরা ঘুমাতে যাওয়ার আগে গরম পানিতে গোসল করতে পারেন। ফলে টান লাগা থেকে রেহাই পাবেন ।
৯) সাঁতার কাটা খুব ভালো ব্যায়াম। সপ্তাহে অন্তত তিন দিন সাঁতার কাটতে পারেন। এতেও কমতে পারে পেশীর টান লাগার সমস্যা ।
পেশিতে টান লাগলে সম্প্রসারণের নিয়ম (The law of stretching when a muscle is tensed)
১. উরুর সামনের দিকে হলে পা ভাঁজ করে ফেলুন, হাত দিয়ে পায়ের আঙুলের মাথাগুলো ধরুন আর আস্তে আস্তে আপনার নিতম্বের দিকে টানুন।
২. যদি উরুর পেছনে টান লাগে, তাহলে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন। পা ভাঁজ করে হাটুঁ যতটুকু পারেন ধীরে ধীরে বুকের দিকে নিয়ে আসুন। আস্তে আস্তে উরুর পেছনের পেশীতে হালকা মালিশ করুন।
৩. যদি হাঁটুর নিচে পায়ের পেছনে টান লাগলে তবে পা সোজা করে ফেলুন, হাত দিয়ে পায়ের আঙুলের মাথাগুলো ধরুন আর আপনার দিকে ধীরে ধীরে টানুন।
এছাড়াও হঠাত্ করে পেশিতে টান লাগলে কী করবেন? তার জন্য সমাধান আছে গৃহস্থেরই রান্না ঘরে।
- হলুদ সর্ষে (Yellow mustard): কয়েক মিনিটে পেশির টান সারাতে পারে হলুদ সর্ষে। এতে আছে অ্যাসিটিক অ্যাসিড,
যা ‘অ্যাসিটোলকোলিন’ তৈরিতে সাহায্য করে। যা ‘নিউরোট্রান্সমিটার’ হিসেবে পেশির কর্মকাণ্ড
পরিচালনায় সাহায্য করে
- লবঙ্গ তেল (Cloves and oil): পেশি ফোলা রোধ করে লবঙ্গ তেল। পাশাপাশি এর অ্যানাস্থেটিক বা অনুভূতিনাশক
উপদান ব্যথা উপশম করে। টান পড়া পেশিতে কুসুম গরম লবঙ্গ তেল দিয়ে বেশ কয়েকবার মালিশ
করলে উপকার পাওয়া যায়।এবার আর চিন্তা করবেন না। পেশিতে টান পড়লে ঘরোয়া পদ্ধতিতে
এগুলি করলেই উপশম মিলবে।
শেষ কথা
শিরায় টান পড়ার সমস্যা সেরে গেলেও সঙ্গে সঙ্গে কাজে লেগে পড়বেন না। বিশেষ করে এমন কোনো কাজ করবেন না যেগুলো শিরায় চাপ পড়ার কারণ হতে পারে। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে তবেই কাজ করুন।সর্বোপরি আমাদের শরীরের যেকোনো সমস্যাই দেখা যায়না কেনো , কোনোটিই অবহেলা করা উচিত নয়। পায়ের মাংসপেশিতে টান লাগলেও ঘরোয়া চিকিৎসায় যদি উপশম না হয় এবং ঘন ঘন পেশিতে টান লাগে সেক্ষেত্রে বিলম্ব না করে আমাদের বিশেযজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। আপনার স্বাস্থ্য সম্পর্কিত যেকোনো পরামর্শের জন্য আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত Visit করুন ।
মাথা ব্যথা দূর করার ঘরোয়া উপায় (Home remedies for headache)
জন্ডিস রোগের ঘরোয়া টোটকা বা চিকিৎসা (Home remedies for Jaundice)
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে যেসব খাবারে (Foods that increase immunity)