শরীরে রোগব্যাধি প্রতিরোধে সঠিক খাবার খাওয়াটা খুবই জরুরি।কিছু খাবার আছে যেগুলো নিয়মিত খাদ্যতালিকায় রাখলে নিয়মিত খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
সুষম খাবার সুস্থতার জন্য খাওয়াটা জরুরি। না বুঝে অনেকে কম-বেশি খেয়ে শরীরকে রোগাক্রান্ত করে ফেলে। এমনকি সঠিক ডায়েট চার্ট অনুস্মরণ না করলেও শরীর ভেঙে যায় এবং বাসা বাধে নানা রোগব্যাধি।
সঠিকভাবে খাবার না খেলেদেখা দেয় শারীরিক দুর্বলতা । সঠিক ঘুম হয় না। মেজাজ হয়ে ওঠে খিটখিটে। এর প্রভাব পড়ে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে।
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে নিয়মিত যেসমস্ত খাবার খাদ্যতালিকায় রাখা উচিৎ সেগুলো হল –
ভিটামিন ‘এ’
সমৃদ্ধ খাবার, যা কিনা লালশাক, পুঁইশাক টাটকা শাকসবজিতে পাওয়া যায়। এমনকি গাজর, আম, কলা, পেঁপে, রঙিন ফলেও ভিটামিন ‘এ’ বেশি থাকে। মলাঢেলা মাছ, গোশত, দুধ, ডিম তো আছেই।
ভিটামিন ‘এ’-তে বিটাক্যারোটিন থাকে যা ত্বক ও মিউকাস মেমব্রেনের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে, রোগ প্রতিরোধ তন্ত্রের তীব্রতা বৃদ্ধি করে। অ্যান্টিবডি রেসপন্ডে সাহায্য করে, রাতকানা রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে ।
ঘি, দুগ্ধ ও দুগ্ধজাতীয় খাবারে প্রচুর ক্যালসিয়াম থাকে। এছাড়া শাকসবজি, মাছ, চীনাবাদাম ও ডালের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে, যা ম্যাগনেসিয়ামের সঙ্গে যুক্ত হয়েচর্বি কমাতে সাহায্য করে এবং ইমিউন কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
সামুদ্রিক মাছ, সামুদ্রিক খাদ্য, মুরগি, লিভার, ডিমের কুসুম শস্যজাতীয় খাবার, ইলিশ মাছ, মাছের তেল ইত্যাদির মধ্যে সেলেনিয়াম নামক খনিজ লবণ থাকে, যা শ্বেত রক্তকণিকা ও ইমিউন এনজাইমের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। এ তেলের মধ্যে ফ্যাটি অ্যাসিড থাকেযা রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
ম্যাগনেসিয়াম (Magnesium)
টাটকা শাকসবজি, চীনাবাদাম, সামুদ্রিক খাদ্য ও শস্যজাতীয় খাবারে ম্যাগনেসিয়াম থাকে যা ইমিউনিটির কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।
ভিটামিন ‘ই’ (Vitamin E)
উদ্ভিদজাতীয় খাবার, শাকসবজি, ফলমূল, ভেষজ তেলে পাওয়া যায়। শিম, শিমের বিচি, চীনাবাদাম ইত্যাদি। এ ছাড়া প্রাণিজ খাদ্য, ডিম, ডিমের কুসুম, মাছ, গোশত ও দুধে থাকে। এগুলো শ্বেত রক্তকণিকার কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
আমলকী, হরীতকী, পেঁপে, তরমুজ, বাঁধাকপি, টকজাতীয় লেবু, কমলালেবু, পেয়ারা ইত্যাদি। এগুলো কেমিক্যাল মেসেঞ্জার নাম্বার বৃদ্ধি করে। বিশেষ করে ইন্টারফেরন যা ইনফেকশনের প্রসেস প্রতিরোধে আমাদের শরীরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
জিংক (zinc)
সবুজ শাকসবজি, ফলমূল, ডিম, গোশত, সেরিয়াল, চিংড়ি, সামুদ্রিক খাদ্যে জিংক প্রচুর পরিমাণে রয়েছে, যা আমাদের শরীরে ফ্রি রেডিক্যালের কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
রসুন (garlic)
রসুন আমাদের হৃৎপিন্ডকে সুস্থ ও সতেজ রাখে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। রসুনে এন্টি-অক্সিডেন্ট আছে যা ভাইরাস প্রতিরোধের পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়।
গ্রিন টি (green tea)
অন্যান্য চায়ের তুলনায় গ্রীন টি তে ক্যাটেচিনের পরিমান বেশি যা দেহের জন্য উপকারী । গ্রীন টি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে এবং দেহের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে সাহায্য করে।
আদা চা (ginger tea)
আদার মধ্যে উচ্চমানের এন্টি-অক্সিডেন্ট। আদা চা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
মৌসুমী ফল (Seasonal fruits)
যেকোন মৌসুমী ফল দেহের জন্য উপকারী। যেমন এসময়ে আম, জাম, কাঁঠাল, কাম্রাঙ্গা ইত্যাদি। তবে যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের মধ্যে যাদের ব্লাড সুগার বেশি তাদের মিষ্টি ফল এড়িয়ে চলতে হবে।
সবুজ শাক-সবজী (Green vegetables)
সবুজ শাক-সবজিতে আছে ক্লোরোফিল নামক এন্টি-অক্সিডেন্ট । এতে ভিটামিন ও মিনারেলস আছে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। বরবটি, শিম, বেগুন, ধনেপাতা, সবুজ শাক, কঁচু শাক, পুই শাক, পালং শাক ইত্যাদি।
টমেটো (tomato)
টমেটোর মধ্যে লাইকোপিন নামক এন্টি-অক্সিডেন্ট আছে যা হৃৎপিন্ড ভালো রাখে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। এতে ভিটামিন সি, পটাসিয়াম, ফোলেট ও ভিটামিন কে আছে। টমেটো সালাদ, টমেটো স্যুপ, তরকারিতে টমেটো দিয়ে রান্না করে খেতে পারবেন।
মাশরুম (mushroom)
মাশরুমে আছে প্রোটিন ও এন্টি-অক্সিডেন্ট যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। মাশরুমের স্যুপ, গার্লিক মাশরুম শরীরের জন্য বিশেষ উপকারী।
কাল গোলমরিচ (Kale pepper)
কাল গোলমরিচে আছে এন্টি-অক্সিডেন্ট।যেকোন ভাইরাস প্রতিরোধের পাশাপাশি গোলমরিচ ক্যান্সারও প্রতিরোধ করে। স্যুপ, মাংসের তরকারি বা বিভিন্ন রান্নায় কাল গোলমরিচের গুড়া ব্যবহার করা যায়।
মধু (honey)
যাদের সর্দি, কাশি, ঠান্ডা, জ্বর, খুশখুশ, গলা ব্যাথা ও টনসিল আছে মধু তাদের জন্য খুবই উপকারী।মধুতে এন্টি-অক্সিডেন্ট ও মিনারেলস বিশেষ করে জিংক আছে যা মুখের রুচি বাড়ানোর পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
ভিটামিন-কে (Vitamin K)
ভিটামিন-কে জাতীয় খাবার করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সক্ষম।সবুজ শাক-সবজি, টমেটো, শশা, ফুলকপি, ধনেপাতা, ব্রোকলি, পাতাকপি, শক্ত পনির ইত্যাদিতে ভিটামিন – কে আছে।