মানব শরীরের প্রায় সর্বাঙ্গে জটিলতা সৃষ্টিকারী একমরণ ব্যাধি রোগের নাম ডায়াবেটিস। তেমনি ডায়াবেটিসের জটিলতায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের নাম পা, বিশেষত পায়ের পাতা। তাই আজকে আমরা জানবো ডায়াবেটিস রোগীর পায়ের ক্ষত শুকানোর উপায়।
মূলত: ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর রক্তে Glucose মাত্রা যথাযথ নিয়ন্ত্রণে রাখা না গেলে পায়ের ধমনির প্রাচীর ক্রমান্বয়ে পুরু হতে থাকে। সঙ্কীর্ণ হতে পারে রক্ত চলাচলের পথ, ব্যাহত হয় আক্রান্ত অঙ্গে যথাযথ রক্ত সরবরাহ । সেই সাথে পায়ের স্নায়ুকলাও আক্রান্ত হয়ে লুপ্ত হয় পায়ের বোধশক্তি, কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে পায়ের নাড়াচাড়া ।
তা ছাড়া অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে অকার্যকর হয়ে পড়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা । দেখা দেয় আক্রান্ত পায়ে ক্ষতসহ নানা রোগজীবাণুর সংক্রমণ। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এমন খাবার খাওয়া উচিত ।
পায়ের অস্থিসন্ধি গুলোর স্বাভাবিক গঠনে দেখা দেয় বিকৃতি । আক্রান্ত পায়ের ঘা সহজে শুকাতে চায় না । ফলে সহজেই আক্রান্ত পা থেকে জীবাণু ছড়িয়ে পড়তে পারে পায়ের গভীর কোষকলাসহ সমস্ত শরীরে ।
কিভাবে বুঝবেন আপনার পা ডায়াবেটিসের জটিলতায় আক্রান্ত কিনা ?
আপনি যদি ডায়াবেটিসে রোগে আক্রান্ত হন এবং আপনার পায়ে যদি নিম্নলিখিত এক বা একাধিক সমস্যা দেখা দেয় তাহলে বুঝতে হবে আপনার পা ডায়াবেটিসের জটিলতায় আক্রান্ত। যেমন-
- আক্রান্ত পায়ে যদি অস্বাভাবিক অনুভূতি বা ঝিমঝিম ভাব দেখা দেয়
- পায়ে অনুভূতিহীনতা দেখা দেয়
- পায়ের নড়ন ক্ষমতা কমে যায়
- পায়ে ব্যথা দেখা দেয়
- হাঁটতে গেলে পায়ে ব্যথা বা অবসাদ দেখা দেয়
- পায়ে ঘা দেখা দেয়
- আক্রান্ত পা বা পায়ের অস্থিসন্ধি সমূহঃ হঠাৎ লাল হয়ে ফুলে যায়
- দীর্ঘ পর্যায়ে পায়ের ঘায়ে জীবাণুর সংক্রমণ দেখা যায়
- যদি আক্রান্ত পায়ে ফোড়া হয় ও পায়ের অস্থিতে জীবাণুর সংক্রমণ দেখা যায়
- পায়ের অস্থিসন্ধির বিকৃতি দেখা যায়
- পায়ের আঙুল এমনকি সমস্ত পায়ে পচন ধরতে দেখা যায়
- যদি রোগের জটিল পর্যায়ে পায়ের ক্ষত থেকে রোগজীবাণু সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পড়া।
তখনই বুঝবেন যে, আপনার পা ডায়াবেটিসের জটিলতায় আক্রান্ত।
কখন আপনার পা ডায়াবেটিসের জটিলতায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে ?
আপনি যখন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন এবং আপনার দেহ যদি নিম্নলিখিত এক বা একাধিক ঝুঁকিতে থাকে। যেমন-
– রক্তে Glucose মাত্রা যদি অনিয়ন্ত্রিত থাকে
– আপনার পা যদি অনুভূতিহীন হয়ে থাকে
– আপনি যদি ধূমপায়ী হয়ে থাকেন
– আপনার পা যদি বিকৃত হয়ে থাকে
– পায়ে যদি কড়া পড়ে থাকে
– পায়ের ধমনি যদি অন্য কোনো রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে
– আগে আপনার পায়ে যদি কোনো ঘায়ের ইতিহাস কিংবা অঙ্গছেদের ইতিহাস থাকে
– ডায়াবেটিসের কারণে যদি আপনার চোখ বা কিডনি আক্রান্ত হয়ে থাকে
– আপনি যদি কিডনি সমস্যার জন্য নিয়মিত ডায়ালাইসিস নিয়ে থাকেন
– আপনার যদি উচ্চ রক্তচাপ বা রক্তে চর্বির মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে
তখনই আপনার পা ডায়াবেটিসের জটিলতায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি বলে মনে করতে হবে ।
ডায়াবেটিস রোগীর পায়ের ক্ষত শুকানোর উপায় চিকিৎসা কী?
ডায়াবেটিসের জটিলতায় আক্রান্ত রোগীর পায়ের চিকিৎসায় ছয়টি পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। যথা-
১. আক্রান্ত পায়ের ওপর দেহের ভার বা চাপ কমাতে হবে
২. পায়ের সংক্রমিত ও অকার্যকর কোষকলা নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে
৩. আক্রান্ত ক্ষতের নিয়মিত ড্রেসিং করতে হবে
৪. রোগজীবাণুর সংক্রমণের ক্ষেত্রে যথাযথ অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে
৫. পায়ের ধমনি আক্রান্ত হলে প্রয়োজনে ভাস্কুলার সার্জারি করতে হবে
৬. ক্ষেত্রবিশেষে আক্রান্ত পা বা পায়ের অংশ কেটে বাদ দিতে হবে।
আর এ ক্ষেত্রে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক নির্ণয় করবেন আপনার কোন ধরনের চিকিৎসার প্রয়োজন।
কাজেই আপনার পা যদি ডায়াবেটিসের জটিলতায় আক্রান্ত হয় বা আক্রান্ত হওয়ার একাধিক ঝুঁকিতে থাকে তাহলে দেরি না করে আজই একজন মেডিসিন কিংবা হরমোন রোগ বিশেষজ্ঞ কিংবা অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
প্রাথমিক পর্যায়ে ডায়াবেটিসের জটিলতায় আক্রান্ত পা শনাক্তকরণের পাশাপাশি এর যথাযথ চিকিৎসা না নিলে আপনার পায়ে পচন ধরতে পারে । বিকৃত হতে পারে পায়ের স্বাভাবিক গঠন। কেটে বাদ দেয়া লাগতে পারে সমস্ত পা কিংবা পায়ের অংশ বিশেষ। এমনকি রোগের জটিল পর্যায়ে আক্রান্ত পায়ের ঘা থেকে জীবাণুর সংক্রমণ সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পড়ে মৃত্যুর ঘটনাও বিরল নয়।
প্রতিরাধে করণীয়
ডায়াবেটিস রোগীর পায়ের ক্ষত শুকানোর উপায় : ‘প্রতিরোধই প্রতিকারের চেয়ে উত্তম পন্থা’- এ কথা মাথায় রেখে এই সমস্যা প্রতিরোধে নিম্নলিখিত স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা যেতে পারে। যেমন-
– প্রতিদিন অন্ততঃ একবার হলেও আপনার পা পর্যবেক্ষণে রাখুন।
– সেই সাথে নিশ্চিত করুন পায়ের নিয়মিত পরিষ্কার -পরিচ্ছন্নতা।
– পায়ের ত্বককে রাখুন সব সময় আর্দ্র, পায়ে নিয়মিত গ্লিসারিন বা ভ্যাসলিনের ব্যবহারে ভালো ফল পাওয়া যায় ।
– পায়ের নখ ছোট রাখুন।
– খালি পায়ে হাঁটা থেকে বিরত থাকুন।
– প্রতিদিন পায়ের মোজা পরিবর্তন ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে ব্যবহার করুন।
– পায়ের জুতা বা পাদুকা নিয়মিত দেখুন।
– পায়ের জন্য যথাযথভাবে মানানসই ও ফিট পাদুকা ব্যবহার নিশ্চিত করুন।
– পায়ে কোনো ক্ষত দেখা দিলে তা পরিষ্কার -পরিচ্ছন্ন গজ বা স্ট্রিপ দিয়ে ঢেকে রাখুন।
– পায়ে কোনো ফোসকা পড়লে তা ফাটানো থেকে অবশ্যই বিরত থাকুন।
– চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া পায়ের কড়ার চিকিৎসার কোনো ওষুধ ব্যবহার কিংবা অযথা কাটাকাটি করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকুন।
– পরিহার করুন অতিরিক্ত গরম কিংবা অতিরিক্ত ঠাণ্ডা তাপমাত্রার সংস্পর্শ।
– রক্তের Glucose যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
– বছরে নিয়ম মাফিক একবার হলেও সমস্ত শরীরের পাশাপাশি পায়ের চেকআপ প্রক্রিয়া চালু রাখুন।
– প্রয়োজনে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ইতোমধ্যে আক্রান্ত পায়ের জন্য বিশেষভাবে তৈরিকৃত ফুটওয়ার ব্যবহারের দ্বারা পায়ে এই জটিলতার বিস্তার ও প্রকোপ অনেকাংশে প্রতিরোধ করা যেতে পারে।
ডায়াবেটিস রোগীর পায়ের ক্ষত শুকানোর উপায়:
পায়ের মাংসপেশিতে টান লাগলে করণীয় (What to do if the leg muscles are tight)
মাথা ব্যথা দূর করার ঘরোয়া উপায় (Home remedies for headache)