তথ্য প্রযুক্তির অগ্রগতির যোগে প্রাপ্ত বয়স্ক বাংলাদেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থী স্মার্টফোন ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু অত্যন্ত আপসোসের বিষয় হলেও সত্য যে, সংখ্যাগরিষ্টই জানে না তাদের জন্য কোন স্মার্টফোন অ্যাপসগুলো ভালো বা কাজে লাগবে। তাই আজকে নিয়ে এসেছি বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য কার্যকারী এমন ১০ অ্যাপস যা ব্যবহার করার মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীরা তাদের পাঠ-গ্রহণে অনেক সুবিধা উপভোগ করতে পারে।
শিক্ষার্থীরা চাইলেই ইন্টারনেট থেকে তাদের প্রয়োজনীয় বিষয়বস্তু খোঁজে বের করে তা তাদের স্মার্ট ফোনেই জমা রাখতে পারে। ইন্টারনেটে আছে শিক্ষণীয় অনেক রকমের সফটওয়্যার বা অ্যাপস, পিডিএফ, ছবি/ইমেইজ, ভিডিও অথবা অসংখ্য ডকুমেন্টরি। আমাদের জাস্ট এগুলোকে সময়মতো ইচ্ছাশক্তি জাগ্রত করে খোঁজে বের করতে হবে। তেমনি ইন্টারনেটে আছে আছে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় কিছু অ্যাপস যা ব্যবহার করে শিক্ষার্থীরা তাদের পাঠদানের বিষয়টাকে আরো সহজ করে তুলতে পারে।
প্রতিদিন ব্যবহারের জন্য দরকারী মোবাইল অ্যাপস
আজকে আমরা এমন ১০ মোবাইল অ্যাপস সম্পর্কে আলোচনা করবো যা প্রতিটা উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের থেকে শুরু করে ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মোবাইল অ্যাপস। এই অ্যাপস ব্যবহারের মাধ্যমে একজন উচ্চমাধ্যমি শিক্ষার্থী খুব সহজে তার জব – অ্যাসাইনমেন্ট অথবা প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট কে জমা রাখতে পাশাপাশি ব্যবহার করতে পারবে। ঠিক একই ভাবে ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরাও এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে উক্ত সহায়তা নিতে পারে এই নিম্নে উল্লেখিত শিক্ষার্থীদের অ্যাপসগুলোর মাধ্যমে।
ছাত্রছাত্রীদের জন্য প্রয়োজনীয় এবং শিক্ষণীয় ১০ টি অ্যাপস
- Google gmail
- Google Translate
- Google Drive
- MS Office
- Speaklar
- Dictionary
- Quora
- Wikipedia
- DIMS
- PDF Reader
Google gmail
তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে গুগল জিমেইল ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের কাছে। Google gmail অ্যাপসটি প্রতিটি শিক্ষর্থীদের মোবাইলেই থাকা দরকার। বন্ধু বান্ধব কিংবা বিদ্যালয়ে অফিসিয়াল সাইটে ইমারজেন্সি দরকারে মেসেজ দেওয়া যায় এই জিমেইল দিয়ে। এছাড়াও বর্তমানে চাকুরির জন্য আবেদন কিংবা অফিসে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে প্রতিনিয়ত জিমেইল এর ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে ১.৪ বিলিয়ন সচল বা অ্যাক্টিব ইউজার রয়েছে। তাহলে ধারণা করাই যাচ্ছে তথ্য ও যোগাযোগময় পৃথিবীতে কী পরিমাণ মানুষ জিমেইল ব্যবহার করছে। এবং তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই হিসেবে আমরা যদি বিশ্বের সাথে তাল মিলাতে চাই, একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদেরও উচিত এখন থেকে জিমেইল ব্যবহার করা এবং শেখা।
Google Translate
Google Translate হলো শিক্ষার্থীদের জন্য গুগলের আরেকটি সার্ভিস। যদিও অকাট্যভাবে তা শুধু মাত্র ছাত্র কিংবা ছাত্রীদের জন্যই তৈরি করা হয় নি। বিশ্বের ১০৮+ ভাষা এতে সংযোগ করা আছে। আপনি চাইলেই এই ১০৮ টি ভাষার যেকোনো ১ টি ভাষায় আপনার মাতৃভাষায় কনভার্ট করতে পারবেন।
আমরা যারা শিক্ষার্থী আছি, আমাদের প্রায় সময়ই বিশেষ করে ইংরেজি ভাষা বুঝতে সমস্যা হয় এছাড়াও আছে অন্য ভাষাও। তবে এর থেকে পরিত্রাণ পেতে আমরা গুগল ট্রান্সলেট ব্যবহার করতে পারি।
আমাদের প্রথমেই গুগর ট্রান্সলেটে প্রবেশ করে একটি ভাষা সিলেক্ট করতে হবে। তারপর বয়েচ ট্যাবটি ক্লিক করে আমাদের মাতৃভাষায় কথা বললেই গুগল ট্রান্সলেট তার AI দ্ধারা বয়েস কে লেখায় পরিণত করবে। এছাড়া আমরা টাইপিং করেও লিখতে পারি। ইনপুট দেওয়ার পর এবার ডানদিকে আমাদের কাঙ্খিত ফলাফল অর্থাৎ চয়েজ করা অন্য ভাষাটার লেখা কপি চলে আসবে। চাইলে আমরা সে লেখাটাকে মোবাইল সাউন্ডে শুনতেও পারি। তাই শিক্ষার্থীদের জন্য এই অ্যাপসটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
Google Drive
তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর যুগে বর্তমানে ডাটা কালেক্ট করে জমা করার জন্য স্টোরেজ এর চিন্তা দূর করার লক্ষ্যেই Google Drive অ্যাপসটি গুগল কর্তৃক তৈরি হয়েছে। একজন শিক্ষার্থী তার বিদ্যালয়ের সমস্ত ডকুমেন্ট গুগল ড্রাইভে স্টোরেজ করে রাখতে পারে সম্পূর্ণ ফ্রীতে। শুধু একজন শিক্ষার্থীই না একজন ব্যবসায়িকও ইচ্ছা করলে তার সমস্ত ডাটা বা হিসাব নিকাশ গুগল ড্রাইভে সেভ করে রাখতে পারে।
বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর জন্য সমস্ত অ্যাসাইনমেন্ট এবং অন্য কিছু সে খুব সহজে এবং সম্পূর্ণ ফ্রিতে গুগল ড্রাইভে রাখতে পারে। যেকেউ তার একটি জিমেইল একাউন্ট দিয়ে মোট একটি গুগল ড্রাইভ ব্যবহার করতে পারবে । প্রত্যেক জিমেইল এর আন্ডারে সর্বমোট ১৫ জিবি স্টোরেজ থাকবে। আর এই ১৫ জিবি স্টোরেজই ব্যবহার করতে পারবে।
MS Office
MS Office বা Microsoft Office মূলতে অফিসিয়াল কাজের জন্য বেশি ব্যবহৃত হয়। একজন শিক্ষার্থীর কাছেও এই সফটওয়্যারটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। MS Office শিখার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী তার ভবিষ্যৎ এর জবের বিষয়ে কিছুটা হলেও এগিয়ে থাকবে। এমএস অফিস এ আরো আছে MS Excel, MS Powerpoint, MS Word. এই তিনটির যৌথ কম্বিনেসনে MS Office তৈরি হয়েছে।
যারা বর্তমানে জবরত অবস্থায় আছে, তারা ফিল করতে পারে তাদের কাছে কতটা প্রয়োজন এমএস অফিস সফটওয়্যারটা। বর্তমানে প্রযুক্তি নির্ভর যোগে অফিসের প্রধান সফটওয়্যারটাই হলো MS Office. সুতরাং প্রত্যেকটা শিক্ষার্থীর উচিত এমএস অফিস কে আয়ত্ত করে রাখা।
কম্পিউটারের গতি বাড়িয়ে নিন অল্প সময়ে
Speaklar
আমরা বাংলাদেশী যারা ইংরেজীতে একটু বেশি দূর্বল, তাদের জন্য Speaklar অ্যাপসটা হলো একটু আশির্বাদ সরূপ। বর্তমানে Speaklar অ্যাপসে প্রায় হাজারের উপর ইউজার আছে, যারা তোমার মতোই ইংরেজি শিখতে চায়।
এই অ্যাপসের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এখানে সাইন ইন করার পর এই অ্যাপস এ সাইন ইন করা সবার সাথে ইংরেজিতে কথা বলতে পারবে। এটা চ্যাট করার মাধ্যমে এবং চাইলে কল করার মাধ্যমেও পারা যায়। তবে প্রাথমিক অবস্থায় মেসেজিং এর মাধ্যমেই করা শ্রেয়। সবচেয়ে বড় কথা হলো এখানে লিখতে গিয়ে অথবা বলতে গিয়ে ভুল হলে লজ্জার কিছু নেই কেননা Speaklar সাইন ইন করা সবাই তোমার মতো নতুন এবং তারাও ইংরেজি শিখতে এসেছে।
Dictionary
এটা এই আর্টেকেলে উল্লেখ না করলেই নয়। বর্তমান স্মার্ট ফোনের যুগে আমাদের সকল ছাত্রছাত্রীদের স্মার্ট মোবাইলে Dictionary অ্যাপসটা থাকা জরুরি। আমরা পড়ার মাঝে যদি কোনো রকম ভাষা নিয়ে দ্ধিধায় পড়ে যাই, তাহলে সাথে সাথেই ডিকসেনারি তে সার্চ দিয়ে সে শব্দের মেইনিং টা খুঁজে বের করতে পারি।
একজন শিক্ষার্থী তার পাঠ্যগ্রহণ কালে নানা রকম নতুন শব্দের সাথে পরিচিত হতে হয়, সে ক্ষেত্রে তার তার মোবাইলে Dictionary অ্যাপসটা থাকা অত্যন্ত জরুরি। শব্দের অর্থ না জানলে তা সাথে সাথেই আমরা Dictionary তে সার্চ দিয়ে উত্তরটা জেনে নিতে পারি।
Quora
বর্তমানে সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রশ্ন উত্তর সাইট হলো Quora . এখানে বিলিয়ন এর উপর ইউজার আছে যাদের মধ্যে প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা হয়। কোয়ারা র মধ্যে যেকোনো প্রশ্ন ছোড়ে দিলে কয়েক মিনিটের মধ্যেই উত্তর পেয়ে যাবেন। তাই একজন শিক্ষার্থীকে পড়তে গেলে অনেক সমস্যার সম্মূখীন হতে হয়, যদি সে সেই সমস্যাগুলোকে কোয়ারাতে Quora করে, তাহলে সে সাথে সাথে অভিজ্ঞ কারো থেকে উত্তর পেয়ে যাবে। সে জন্য আমি মনে করি একজন শিক্ষার্থীর মোবাইরে Quora অ্যাপসটি থাকা জরুরি।
Wikipedia
Wikipedia কে বলা হয় বিশ্ব কোষ। কেননা এতে আছে পৃথিবীর সমস্ত জ্ঞান ভান্ডার। আপনার সমস্ত সমস্যা, ইতিহাস, ইত্যাদি সম্পর্কে ফুল ডিটেইলস সম্পর্কে জানতে Wikipedia বিকল্প আর কিছুই নেই।
ছাত্রছাত্রীদের পড়তে হয় ইতিহাস, ব্যক্তিবর্গ, ইত্যাদি নিয়ে। এসব তথ্যের যদি ঘাটতি পাঠ্য বইয়ে থাকে, তাহলে সে অবশ্যই Wikipedia থেকে এসব সমস্যার সমাধান পেতে পারে। উইকিপিডিয়াতে বিশ্বের সমস্ত প্রতিষ্ঠান হতে শুরু করে ব্যক্তিবর্গ এবং ইতিহাস বা কোনো কিছুর রুট লেভেলের সমস্ত ডাটা Wikipedia তে আছে। সুতরাং শিক্ষার্থীরা ইচ্ছা করলে Wikipedia কে তাদের সমস্যা সমাধানে কাজে লাগাতে পারে।
আপনার ফেজবুক আইডে ভেরিভাই করুন
DIMS
DIMS মোবাইল অ্যাপসটা শুধু শিক্ষার্থীই না, এটা সকলের কাছেই থাকা শ্রেয়। এই অ্র্যাপসটা মূলত মেডিসিন বা ঔষধ নিয়ে। আমরা যখন বিভিন্ন ফার্মেসিতে যাই তখন আমাদের ঔষধ দিয়ে দেয় বিক্রেতারা। কিন্তু আমরা এই ঔষধের সঠিক এবং প্রোপার দামটা জানি না। এজন্য অনেক সময় বিক্রেতারা আমাদের কাছ থেকে অর্জিনাল দাম থেকেও আরো বেশি দাবি করে। আমাদের বাধ্য হয়ে দিতে হয় কেননা আমরা এ বিষয়ে অজ্ঞ। আজ থেকে এই অজ্ঞতা দূর করুন DIMS অ্যাপস ডাউনলোড করার মাধ্যমে। আমরা যে ঔষধটি ক্রয় করবো DIMS অ্যাপস এর সার্চ বক্সে গিয়ে ঔষধের গায়ে থাকা নামটি দিয়ে সার্চ দিয়ে দিবো এবং সাথে সাথেই এই অ্যাপসটি আমাদের আসল দামটি দেখাবে এবং কী কী কারণে এই ঔষধটি ব্যবহার করা হয়, তার একটা গাইডলাইনও পেয়ে যাবো। সুতরাং বুঝাই যাচ্ছে DIMS মোবাইল অ্যাপসটি শিক্ষার্থী সহ সবার জন্য কেমন উপকারের। আশা করি সবাই এই অ্যাপসটি ব্যবহার করবেন।
PDF Reader
শিক্ষার্থীদের জন্য যদিও এই অ্যাপসটি বেশি একটা ফলপ্রসু না কিন্তু একেবারে নগন্য কিছু না। অনেক সময় আমাদের ইন্টারনেট থেকে বিভিন্ন রকম পিডিএফ ফাইল ডাউনলোড করে পড়তে হয়। আমাদের অনেকের মোবাইলে ডিপল্ট অবস্থায় PDF Reader নামে একটা সফটওয়্যার দেওয়া থাকে, কিন্তু কারো কারো ক্ষেত্রে সেটা দেওয়া থাকে না। সেক্ষেত্রে PDF Reader অ্যাপসটি ডাউনলোড করে পিডিএফ ফাইল কে ওপেন করতে হবে।
মূলত পিডিএফ ফাইল রিড করার জন্যই শিক্ষার্থীদের PDF Reader অ্যাপসটি দরকার।
আজকের এই দশটি অ্যাপস ব্যবহার করে আশা করি শিক্ষার্থীরা খুবই উপকৃত হবে। বর্তমানে সময়ে চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের এই দশটি অ্যাপস আশা করি খুবই কাজে দিবে। কিছু অ্যাপস আছে এখনই কাজে দিবে আর কিছু আছে জব লাইফে কাজে দিবে। তবে ছাত্র থাকা অবস্থায় প্রেকটিস করলে তো সমস্যার কিছু নেই । তাই হাই রিকমান্ড থাকবে উক্ত অ্যাপসগুলো একবার হলেও ব্যবহার করা।