স্বামীকে যে কথাটি বললে স্ত্রী জাহান্নামী হয় তা জানার পূর্বে চলুন জানা যাক, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত তা জানা যাক। এই পৃথিবীতে পার্থিব যত সম্পর্ক রয়েছে, তাঁর মধ্যে স্বামী ও স্ত্রীর সম্পর্ক হলো সবচেয়ে নিরাপদ, হালাল ও পারস্পারিক গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। আর যে কারণে আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কোরআন শরীফে বলেছেন, “ হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গীনীকে (স্ত্রী) সৃষ্টি করেছেন; আর (পৃথিবীতে) বিস্তার করেছেন তাদের দু’জন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী “ (সুরা নিসা : আয়াত ১)
উক্ত আয়াত থেকেই বোঝা যায় যে, স্বামী এবং স্ত্রীর মধ্যে রয়েছে এক অন্তীম সম্পর্ক যা বেধ্যযোগ্য নয়। আর দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে আমাদেরকে নানা রকম কঠিন পরীক্ষাসহ দূর্ভিক্ষের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। মাঝে এমন বিরূপ পরিস্থিতিতে পড়তে হয়, যা কখনো শেয়ার করা যোগ্য নয় কিংবা ভুলা অসম্ভব। ( ইসলামী নিয়ম অনুযায়ী স্ত্রীকে হাত খরচ দিন )
স্বামী ও স্ত্রীর সম্পর্ক আল্লাহ প্রদত্ত আর এই সম্পর্কটি হলো দুনিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং নিয়ামত ও বরকতময় কিন্তু কিছু কিছু ছোট্ট কারণে এই সম্পর্ক ছিন্ন হতে পারে পাশাপাশি স্বামী বা স্ত্রী জাহান্নামীও হতে পারে। সে প্রেক্ষিতে আজকের আর্টিকেলে আমরা জানবো কোন কথাটি একজন স্ত্রী স্বামীকে বললে পরকালে সে জাহান্নামের আগুণে পুড়বে। তাহেল চলুন জানা যাক। ( যে আমল কখনো ব্যর্থ হয় না এবং নারীদের ফাঁদ পাতা আবেদমী বিজ্ঞাপন সম্পর্কে জানুন)
স্বামীকে যে কথাটি বললে জাহান্নামী হবে স্ত্রী – hellish words of the wife
সাধারণত আমরা সকলেই জানি যে, কাফির, মুনাফেক, বেঈমান সহ আরো অনেকে জাহান্নামে যাবে। কিন্তু একজন মুসলিম ইমানদার নারীও জাহান্নামে চলে যেতে পারে শুধু মাত্র একটি বাক্য কিংবা কথা বলে। তাহলে সে কথাটি কতটা তাৎপর্যপূর্ণ হতে পারে, সে বিষয়ে একবার ভেবেছেন? বিলম্ব না করে চলুন, মহানবী সা: এর মদিনার একটি ঘটনা কিংবা হাদিসের আলোকে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাক।
হযরত আবু বকর ( রা: ) বর্ণনা করিয়াছেন, আমরা একদা রাসূল সা: এর খেদমতে উপস্থিত ছিলাম। আর ঠিক এমন সময় সূর্যগ্রহণ আরম্ভ হইল। তৎক্ষণাৎ রাসূলুল্লাহ সা: মসজিদের দিকে রওনা হলেন। খুব দ্রুত তিনি মসজিদের দিকে অগ্রসর হইলেন। এমন দ্রুত যে, নিজের শরীরের চাদরখানা পর্যন্ত ঠিকভাবে গাড়ে না দেওয়াতে সেই চাদরটি হেঁচড়াইয়া যাইতেছিল। সেখানে উপস্থিত সকল লোকজন হযরত মোহাম্মদ সা: এর পিছনে ছুটিয়া চলিল। হযরত যখন মসজিদে প্রবেশ করিলেন, তখন তিনি নামাজে দাড়িয়ে গেলেন লম্বা আয়াতে দুই রাকাত নামাজ আদায় করিলেন। এমন লম্বা আয়াত পাঠ করিলেন যে, নামাজ শেষ হওয়ার সাথে সাথে সূর্যগ্রহণও শেষ হয়ে গেলে।
নামাজ শেষে এক পর্যায়ে সাহাবীগণ নবী সা: এক প্রশ্ন করিলেন হে রাসূল সা:, নামাজে দাঁড়ানো অবস্থায় আমরা আপনাকে দেখিলাম আপনি যেন হাত বাড়াইয়া কোনো বস্থু ধরার জন্য অগ্রসর হইলেন এবং তৎক্ষণাৎ পিছিয়ে আসলেন। (এইসবের কারণ কি ছিল?) তখন নবী মোহাম্মদ সা: সকলের প্রতি বলেছেন, আমি তখন বেহেস্তকে অতি নিকটবর্তী স্থানে দেখিতে পাইয়া ইহা হইতে একটি আঙ্গুরের ছড়া আনিতে ইচ্ছা করেছিলাম, যদি আমি সেই আঙ্গুরের ছড়া নিয়ে আসতাম, তবে তোমরা তা দুনিয়া শেষ হওয়া পর্যন্ত ভক্ষণ করিতে পারতে। ( কারণ, বেহেশতের সমুদয় বস্তু অফুরন্ত ) । দোযখকেও ঠিক ঐরূপ কাছ থেকেই দেখিছি। উহার মতো এতো বড় ভয়ঙ্কর দৃশ্য আমি আর কখনো দেখি নাই। দোযখ কিংবা জাহান্নামের অধিকাংশ বাসিন্দা ছিল নারী জাতি। তখন ছাহাবীগণ আগ্রহের সহিত জিজ্ঞাসা করিল, ইয়া রসূল আল্লাহ, নারী জাতির এই অবস্থা কি কারণে? তখন নবী সা: বলিল, ওহাদের কুফরীর কারণে। তখন ছাহাবীগণ পুনরায় আবার জিজ্ঞাসা করিলেন, সেই কুফরী করা কি আল্লাহর সাথে কুফরী করা অর্থে বুঝিয়েছেন? তখন রাসূল সা: বলিলেন ”না” । ( এখানে কুফরীর অর্থ নেমক হারামী ও না শোকরগোজারীর স্বাভাব )। তাহারা তাদের স্বামীর নিকট কোনো রকম শোকর আদায় করে থকে না। এহসান তথা উপকারের নেমক হারামী করে থাকে। যে ব্যক্তি (স্বামী) জীবনভর তাহাদের উপকার করিয়াছে, কিন্তু তাঁর(স্বামীর) একটি ভূল বা ক্রটি দেখিবার মাত্র বলে ফেলে “সারা জীবন আমি/আমরা কোনো ভালো ব্যবহার পাই নাই”
মূলত নারীদের সে কথাটি হলো- The hellish words of the wife –
مَا رَأَيْتُ مِنْكَ خَيْرًا قَطُّ “ “
(মা রাআইতু মিনকা খাইরান কাত্তু)
তোমার থেকে কখনো ভালো ব্যবহার পেলাম না।
আমি তোমার কাছে মনোপূত কোন কিছু কখনো দেখিনি।
প্রিয় পাঠক, আমাদের এই দুনিয়ায় আল্লাহ তা’আলা ধনী ও গরীব সব মিলিয়ে আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। এখন একজন পিতা কিংবা স্বামী তাঁর পরিবারের দিকে তাকিয়ে সে প্রতিনিয়ত হাঁড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করে যাচ্ছে আমাদের সুখ ও শান্তির জন্য। স্বামী তাঁর স্ত্রীর সুখ ও শান্তির জন্য সর্বদা চিন্তায় বিভোর অবস্থায় থাকে। সে যথা সাধ্যভাবে চেষ্টা করে তাকে সুখে রাখতে। এখন স্বামীর অভাবের কারণে যদি সে স্ত্রীকে কোনো ঈদ কিংবা অনুষ্ঠানে একটি নতুন জামা, কাপড় কিংবা পছন্দের কিছু কিনে দিতে না পারে, তখনেই অনেক টাইপের নারীরা বলে ফেলে ”তোমার সাথে সংসার করে কিংবা বিয়ে হয়ে আমার জীবনটা জাহান্নাম হয়ে গেছে, তোমাকে বিয়ে করে আমি কিছুই পাই নি, এই ঘরে এসে বা বিয়ে হওয়ার পর থেকে আমি কি পেলান সহ ইত্যাদি ধরনের অসন্তুষ্টিমূলক কথা-বার্তা” মনে রাখবেন, এই ধরনের স্ত্রীদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের দুঃসংবাদ।
তবে অনেক ক্ষেত্রে আমাদের সমাজে দেখা যায় যে, অনেক স্বামী তাঁর স্ত্রীর উপর নানা রকম নির্যাতন করে থাকে। সত্যিকার অর্থেই সে তাঁর স্ত্রীর কোনো রকম খরচ বহন করে না। বরং প্রতিনিয়ত মার-ধর সহ নানা রকম টরচার করে থাকে। তাদের ক্ষেত্রে ইসলামিক স্কলাররা এই দিকটিকে অন্যভাবে ভেবেছেন। অর্থাৎ যেহেতু তাদের ক্ষেত্রে স্বামীর প্রতি সন্তুষ্ট হওয়ার কোনো রকম ক্ষেত্র নেই, সেহেতু সেসকল স্বামী স্ত্রীদের ক্ষেত্রে এই কথাটি প্রযোজ্য হবে না।
সুধী পাঠক, আশা করি, সম্পূর্ণ আর্টিকেলটির মাধ্যমে আপনারা বুঝতে সক্ষম হয়েছেন যে, একজন স্ত্রীর ও স্বামীর কোন কোন ব্যাপারগুলোতে আরো সচেতন হওয়া উচিত। আমাদের জীবনকে যদি আমরা কোরআন ও হাদিস এর আলোকে গঠন করতে পারি, তাহলে সার্বিকভাবেই আমরা উপকৃত হতে পারবো।।
স্ত্রীর জাহান্নামী কথা নিয়ে শেষ কথা
যেহেতু আমরা মানুষ তাই আমাদের জীবনের চলা-পেরায় হতে পারে নানা রকম ভুল। প্রিয় পাঠকগণ, আজকের হাদিসের ক্ষেত্রে যদি আপনি আপনার আচরণকে সাদৃশ্যপূর্ণ দেখতে পান, তাহলে দয়া করে আল্লাহ তা’আলার নিকট ক্ষমা চেয়ে পুনরায় ইসলামের সকল নিয়ম কানুন সঠিকভাবে পালন করুন। অন্যথায় নবী সা: এর কথা মোতাবেক, সেই সকল স্ত্রী গণ জাহান্নামী হবে। এছাড়াও আজকের আর্টিকেল তথা স্বামীকে যে কথাটি বললে স্ত্রী জাহান্নামী হয় পর্বে আমরা আরো জানতে পেরেছি যে, স্ত্রীদের পাশাপাশি স্বামীদেরও উচিত স্ত্রীদের প্রতি আরো সহনশীল হওয়া। কেননা বর্তমানের এই ফেতনাময় দুনিয়ায়, স্বামী বা স্ত্রীর যেকেউ ফেতনা দ্ধারা আকৃষ্ট হয়ে যেতে পারে অথবা নিজের অজান্তে গা ভাঁসিয়ে দিতে পারে। আমাদেরকে এই বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। আর এই ধরনের কথা বলা থেকে বিরত থাকতে হবে। তাই সার্বিকভাবে আজকের আর্টিকেল থেকে উক্ত শিক্ষাটি গ্রহণ করে আশা করি সকল স্ত্রীগণ উপকৃত হতে পারবে।