আসসালামু আলাইকুম, আজ আমরা আলোচনা করব ক্যাডেট কলেজে চান্স পাওয়ার সহজ উপায় সম্পর্কে। ক্যাডেট কলেজে কয়েকটি ধাপের মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলকভাবে বাছাই করে নেওয়া হয়। এই বাছাই প্রক্রিয়া বেশ কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন করা হয়। ক্লাস সিক্সে ওঠার সময় থেকে শুরু হয় প্রত্যেকের মধ্যে তুমুল প্রচেষ্টা। এই চেষ্টা ক্যাডেট কলেজে ভর্তি পরীক্ষার জন্য হয়ে থাকে। এ সময় প্রচুর ছাত্র ছাত্রী প্রস্তুতি নিয়ে থাকে ক্যাডেট কলেজে চান্স পেতে।
বর্তমানে সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সর্বত্রই সমাদৃত কলেজ হচ্ছে ক্যাডেট কলেজ। শিক্ষার গুণগত মান এবং মানসম্মত পরিবেশ কিংবা গঠন নিয়ম কানুনের মাধ্যমে পাঠদান দেওয়া হয় এবং প্রতিষ্ঠানগুলো অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে একদমই আলাদা। তবে ক্যাডেট কলেজে চান্স পাওয়ার সহজ উপায় কি? কিভাবে ক্যাডেট কলেজে চান্স পাওয়া যায়? ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হওয়ার যোগ্যতা? ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
ক্যাডেট কলেজ
ক্যাডেট কলেজে চান্স পাওয়ার সহজ উপায় সম্পর্কে জানার আগে ক্যাডেট কলেজ সম্পর্কে কিছু কথা বলে নেওয়া যাক। সারা বাংলাদেশে মোট ১২টি ক্যাডেট কলেজ রয়েছে। তার মধ্যে ছেলেদের জন্য ক্যাডেট কলেজ মোট নয়টি এবং মেয়েদের জন্য তিনটি ক্যাডেট কলেজ। চট্টগ্রামের ফৌজদার হাটে ১৯৫৮ সালের সর্বপ্রথম ক্যাডেট কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। যেটি আয়োজনের দিক থেকে সর্বাধিক বড় ক্যাডেট কলেজ। আর মেয়েদের জন্য সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজ।
ক্যাডেট কলেজের লক্ষ্য
ক্যাডেট কলেজ গুলোর মূল লক্ষ্য আসলে কি? এমন প্রশ্ন কম বেশি সবার মনেই আসতে পারে। ক্যাডেট কলেজের লক্ষ্য হচ্ছে, প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতে সেনাবাহিনী হিসেবে প্রস্তুত করা। এজন্য সেনাবাহিনীতে যাদের শিক্ষার্থীরা যোগদান করতে যোগ্য হতে পারে এজন্য তাদের শুরু থেকে শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় ও প্রস্তুত করা হয়।
ক্যাডেট কলেজে পড়াশোনা করতে হলে ইংরেজি মাধ্যমে অর্থাৎ ইংলিস ভার্সনে পড়াশোনা করতে হয়। আর তাদের বইসমূহ এনসিটিবি প্রণীত শিক্ষা ক্রম অনুসরণ করে তৈরি করা হয়। অর্থাৎ আমরা সাধারণত যে বইগুলো সরকার থেকে পেয়ে থাকি একই বই তারাও পড়ে থাকে কিন্তু তাদের বই ইংরেজি ভার্সনে লেখা থাকে এবং আমাদের বাংলা ভার্সনে।
ক্যাডেট কলেজে ভর্তি ধাপসমূহ
ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হতে হলে, শিক্ষার্থীদের কে কোন জটিল প্রক্রিয়া সম্মুখীন বা মুখোমুখি হওয়ার প্রয়োজন নেই। নিজের ধাপগুলো ভালো করে পড়লে ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হওয়ার ধাপসমূহ জানতে পারবেন।
- প্রথমত শিক্ষার্থীদের কে একটি লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয় এবং সে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে
- দ্বিতীয়ত, মৌখিক পরীক্ষা অর্থাৎ ভাইবার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে এবং তাতে উত্তীর্ণ হতে হবে।
- সর্বশেষ মৌখিক পরীক্ষার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদেরকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়ে থাকে।
ব্যাস এই কয়েকটি ধাপগুলো অনুসরণ করে শিক্ষার্থী ভর্তি নেওয়া হয়। ধাপগুলোর মধ্যে প্রত্যেকটি যদি কেউ হতে পারে তবে সে ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হওয়ার যোগ্যতা রাখে বলে বিবেচিত হবে।
ক্যাডেট কলেজে ভর্তি পরীক্ষার নম্বর সমূহ
ক্যাডেট কলেজ এ ভর্তি হওয়ার জন্য যে পরীক্ষাগুলো নেয়া হয়ে থাকে তাতে বছরের শেষে কিছু না কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। তবে সর্বশেষ সার্কুলার অনুযায়ী জানা যায় অনুষ্ঠিত ভর্তি পরীক্ষার মানবন্টন হচ্ছে-
- ইংরেজিতে ১০০ নম্বর
- বাংলাতে ১০০ নম্বর
- গণিতে ১০০ নম্বর
- বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়, বিজ্ঞান, আইসিটি বা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ও সাধারণ জ্ঞান- এই চারটি বিষয় মিলিয়ে ৪০ নম্বর
ক্যাডেট কলেজে পড়াশোনা করতে হলে ষষ্ঠ শ্রেণীর বোর্ড বইটি ভালো করে পড়তে হবে। পাশাপাশি ক্যাডেট কলেজে পড়াশোনা করার জন্য শারীরিকভাবে নিজেকে করে তুলতে হবে ফিটফাট শুরু থেকেই।
ক্যাডেট কলেজে চান্স পাওয়ার সহজ উপায়
ক্যাডেট কলেজে চান্স পাওয়ার পথ একটি। সেটি হচ্ছে ঠিকভাবে পড়াশোনা করতে হবে। সবশেষ শ্রেণীতে উঠলে শুরু থেকেই একটু একটু করে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে ক্যাডেট কলেজে পড়ার জন্য। প্রস্তুতি নিতে হবে ভর্তি পরীক্ষার জন্য। বাংলা ব্যাকরণ কে গুরুত্ব দিতে হবে সবার ঊর্ধ্বে। বোর্ড বইটা ভালোভাবে আনতে পারলেই পড়াশোনা এগিয়ে যাবে। ইংরেজি গ্রামারের উপর যথেষ্ট প্রায়োরিটি দিতে হবে প্রথম থেকে। কারণ প্রত্যেকটি বই এবং ক্লাস করানো হবে ইংলিশে, সেখানে বাংলা ভার্সনের বই নেই। সকল বই ইংলিশ ভার্সনে।
গণিত বিষয়ে কোনো সমস্যা থাকলে তা সমাধান করার কৌশল অবলম্বন করতে হবে। সৃজনশীলতা থাকতে হবে। মনে করুন শিক্ষার্থীকে কোন একটি টপিক নিয়ে প্যারাগ্রাফ লিখতে বললে, শিক্ষার্থীর সেই বিষয়ে কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ টি লাইন লেখার দক্ষতা থাকতে হবে। সেটি হোক ইংরেজি কিংবা বাংলাতে।
সাধারণ জ্ঞানের পুরো নাম্বার পাওয়ার জন্য সাম্প্রতিক বিষয়গুলো সম্পর্কে ব্যাপক পরিমাণ ধারণা রাখতে হবে। এজন্য নিয়মিত পত্রিকা ও ম্যাগাজিন করার অভ্যাস রাখতে হবে।
ইংরেজির জন্য প্রস্তুতি
ক্যাডেট কলেজে চান্স পাওয়ার সহজ উপায় সমূহের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ইংরেজিতে ভালোভাবে প্রস্তুতি নেওয়া। ক্যাডেট কলেজে পড়তে হলে ইংরেজিতে পারদর্শী থাকতে হবে। এছাড়াও ক্যারেটে পড়াশোনা করতে হলে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াশোনা করতে হবে এজন্য আগে থেকে ইংরেজিতে বেসিক ধারণা থাকতে হয়। পাশাপাশি গ্রামার সম্পর্কে বেশ ভালোভাবে আইডিয়া ও জ্ঞান রাখতে হবে।
Parts of speech, narration, changing sentence এই ধরনের বিষয়গুলো কিছুটা ধারণা রাখতে হবে। তবে article ও preposition যারা খুবই প্রয়োজনীয়। কোন একটি টপিক দেওয়া হলে যদি বলা হয় এই টপিক নিয়ে একটা প্যারাগ্রাফ লিখে দিতে। তাহলে, ওই বিষয় নিয়ে ১০ থেকে ১২ লাইন লিখতে পারার দক্ষতা ও মানসিকতা থাকতে হবে। ইংরেজি পারবে কিনা পারবে এটা নিয়ে কোন সন্দেহ থেকে থাকলে সেটি দূর করতে হবে ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হওয়ার আগে থেকেই।
মানসিকভাবে বেশ দক্ষ হতে হবে। মনে করুন শিক্ষার্থীকে একটি ছবি। শিক্ষার্থীকে বলা হলো এর উপর ভিত্তি করে ৭ লাইনের একটি প্যারাগ্রাফ লিখে দাও কিংবা একটি ডায়লগ লিখে দাও। ক্যাডেট কলেজে চান্স পাওয়ার সহজ উপায় হিসেবে মানসিকভাবে শক্তিশালী ও দক্ষ হওয়া জরুরী।
বাংলার জন্য প্রস্তুতি
ক্যাডেট কলেজে বাংলা প্রথম পত্র এবং বাংলা দ্বিতীয় পত্র বাদে বাকি সকল বিষয় ইংরেজি ভার্সনে পড়ানো হয়ে থাকে। বাংলায় ভালো করতে হলে ব্যাকরণের বেসিক জানা থাকা প্রয়োজন। কারক, বিভক্তি বুঝে নিতে হবে একটু শুরু থেকে।
অর্থাৎ এ বিষয়গুলো নিয়ে জাস্ট একটু ঘাটাঘাটি করে এগুলো সম্পর্কে একটা সাধারণ ধারণা নিজের মধ্যে তৈরি করতে হবে। যাতে করে পরবর্তী সময়ে এগুলো খুব সহজেই বুঝে নিতে পারো। কিন্তু ব্যাকরণের জন্য কোন বড়সড়ো বই পুস্তক পড়া প্রয়োজন হবে না। সাধারণ যে নবম দশম শ্রেণীর বাংলা ব্যাকরণ বই রয়েছে সেটি সংগ্রহ করে পড়তে হবে। বেসিকগুলো বুঝে নিতে পারলে আর কোন সমস্যা থাকবে না, ইনশাআল্লাহ।
গণিতে ভালো করার উপায়
ক্যাডেট কলেজে চান্স পাওয়ার সহজ উপায় মধ্য অন্যতম একটি গনিতে ভালো করা। অধিকাংশ শিক্ষার্থীর কাছে একটি আদমকে নাম হচ্ছে গণিত বিষয়। কেউ কেউ ভয় পেয়ে থাকেন ভর্তি পরীক্ষায় কোথা থেকে প্রশ্ন আসবে কিভাবে সমাধান করবে ইত্যাদি। দশম শ্রেণীর বই থেকেও কি কিছু আশা সম্ভাবনা রয়েছে? তবে এরকমটা মোটেও নয়। বরং ষষ্ঠ শ্রেণীর বইয়ের যে বিষয়গুলো রয়েছে উচ্চতর ক্লাসের সেইগুলোরই আপডেট করা হয়, এবং এই আপডেট করা বিষয়বস্তু থেকে প্রশ্ন এসে থাকে।
জ্যামিতির পার্টটি একটু ভালোকরে বুঝতে হবে। আবার সুদ- অনুপাত, লাভ – ক্ষতি কিংবা ঐকিক নিয়মের অঙ্কগুলো বুঝতে হবে। এর পাশাপাশি বীজগণিতের উপর গুরুত্ব দিতে হবে। বিশেষ করে, বর্গ ও ঘনের সূত্রগুলো ভালোভাবে আয়ত্তে নিতে হবে।
সাধারণ জ্ঞানে পূর্ণ নম্বর পেতে করণীয়
সাধারণ জ্ঞান নিয়ে অনেকের মধ্যেই একটি ভয়- ভিতি কাজ করে থাকে। কিভাবে এই দিকটা কভার করবেন। তবে ছোট থেকে অর্থাৎ নয় থেকে দশ বছর থেকেই পত্রিকা পড়ার অভ্যাস নিজের মধ্যে গড়ে তোলা উচিত। আপনার সন্তানকে সাধারণ জ্ঞানে দক্ষ করতে তাকে এই ভাবে ট্রেনিং দিন আগে থেকেই। এতে করো, বাচ্চারা কিছুটা হলেও জানতে পারে, পত্রিকার খুঁটিনাটি বিষয়গুলো।
এছাড়াও বাচ্চাদের সাধারণ জ্ঞানের দক্ষতা বাড়াতে পড়তে শেখা মাত্রই তাদের হাতে তুলে দিন শিশুদের ম্যাগাজিন। ফলে, বাচ্চারা ছোট বয়স থেকেই বিভিন্ন ধরনের সাধারণ জ্ঞান সম্পর্কে ধারণা রাখবে।
শারীরিক ভাবে প্রস্তুতি
ক্যাডেট কলেজে চান্স পাওয়ার সহজ উপায় সমূহের অন্যতম একটি শারীরিক ভাবে ফিট থাকা। ছোট থেকে বাচ্চাকে ফিট রাখতে হলে, ওজন ও উচ্চতার সামঞ্জস্যতা থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
মানসিক দিক থেকে প্রস্তুতি
ক্যাডেট কলেজে পড়াশোনা করতে হলে শিক্ষার্থীকে অবশ্যই মানসিকভাবে শক্তিশালী হতে হবে। যেকোন ধরনের সমস্যা মোকাবেলা করার মেন্টালিটি থাকতে হবে। ক্যাডেট কলেজে চান্স পাওয়ার সহজ উপায় হিসেবে মানসিকভাবে শক্তিশালী ও দক্ষ হওয়া জরুরী।