আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় পাঠকবৃন্দ, আজ আমরা আলোচনা করব জুমার দিনের ১১ টি আমল সম্পর্কে। মুসলমানদের জন্য পবিত্র জুম্মা বা জুমাবাদের রাত ও দিনের অপারেশন গুরুত্ব রয়েছে। সাপ্তাহিক এই জুম্মার দিনকে বলা হয় ঈদের দিন। পবিত্র এই দিনটির গুরুত্ব বোঝাতে চেয়ে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে “ জুমা” নামের একটি স্বতন্ত্র সূরাও নাযিল করেছেন। পবিত্র এই জুমার দিনে বিশেষ কিছু আমল রয়েছে। উক্ত আমলগুলো জানতে চেয়ে অনেকে গুগলে সার্চ করে থাকেন জুমার দিনের ১১ টি আমল লিখে। বিশেষ করে তাদের জন্য আমাদের আজকের আর্টিকেলটি, আজকের আর্টিকেলে জুমার দিনের ১১ টি আমল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। এর পাশাপাশি জুমার দিনের বিভিন্ন ফজিলত ও সুন্নত সমূহ আলোচনা করা হবে। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক জুমার দিনের ১১ টি আমল সমূহ।
জুমার দিনের ১১ টি আমল
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মুসলিম সমাজে জুমার দিনটিকে পবিত্র দিন ও পৃথিবীর অন্যতম তাৎপর্য বহো দিবস হিসেবে বিশেষ মর্যাদায় ভূষিত করেছেন। পবিত্র এই জুমা নামে পবিত্র কোরআনে একটি স্বতন্ত্র সূরা নাযিল করা হয়েছে। আল্লাহ্ তায়ালা বলেছেন,
فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلَاةُ فَانتَشِرُوا فِي الْأَرْضِ وَابْتَغُوا مِن فَضْلِ اللَّهِ وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُون
[ الجمعة: 10]
অর্থ- ‘অতঃপর নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করো ও আল্লাহকে পথিক রূপে স্মরণ করো; যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সূরা জুমুআ: আয়াত ১০)
প্রত্যেক সপ্তাহে জুমার নামাজ পড়তে আসা মুসল্লির অভাব নেই। তবে সপ্তাহের প্রতিটি দিন, জুমার দিনের মতো। প্রতিটি ওয়াক্তে, জুমার ওয়াক্তের মত প্রত্যেক মুসলমানের ঈমানের দাবি হওয়া উচিত উপস্থিত হওয়া।
ইসলামের সকল নামাজগুলির মধ্যে জুমার নামাজ অন্যতম। জুমু’আহ শব্দটি একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ একত্রিত হওয়া, সম্মিলিত হওয়া বা কাতারবদ্ধ হওয়া। যেহেতু প্রতি শুক্রবারে প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানরা একত্রে মিলিত হয়ে, একই সময়ে মসজিদে একত্রিত হয়ে জামাতের সাথে জোহরের নামাজ আদায় করে থাকে। এজন্য এই নামাজটিকে ‘জুমার’ নামাজ বলা হয়।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় যাওয়ার পর একবার আনসার সাহাবীরা আলোচনায় বসেছিলেন। তারা বললেন, ইহুদিদের জন্য সপ্তাহে একটি দিন নির্দিষ্ট আছে, যে দিনটিতে তারা সবাই একত্রিত হয়। নাসারা ও সপ্তাহে একদিন সকলের একত্রিত হয়। সুতরাং আমাদের জন্য সপ্তাহে একটি দিন নির্দিষ্ট হওয়া প্রয়োজন। যে দিনটিতে আমরা সবাই একত্রে সমবেত হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করব এবং নামাজ আদায় করবো।
অতঃপর তারা আলোচনাতে বললেন, শনিবারে ইহুদিদের এবং রবিবারে নাসারাদের জন্য নির্ধারণ করা রয়েছে। অবশেষে তারা ইয়াওমুল আরুবা শুক্রবারকে গ্রহণ করলেন (সিরাতুল মুস্তাফা ও দরসে তিরমিজি)।
জুমার দিনের ১১ টি আমল
আজকে আমরা সেই পবিত্র জুমার দিনের ১১ টি আমল সম্পর্কে আলোচনা করছি। নিচে জুমার দিনের ১১ টি আমল সময় দেয়া হলো;
- ঘুম থেকে আগে আগে উঠা
- বেশি বেশি দুরুদ পাঠ করা
- মসজিদে আগে আগে আসা
- দোয়া করা, কারণ জুম্মার দিনে দোয়া ও অধিক পরিমাণে কবুল হয়
- নামাজের কাতার ভেঙ্গে সামনে যাওয়া নিষেধ
- জুমার দিনে সূরা কাহাফ তেলাওয়াত করা
- সুন্দরভাবে গোসল করা
- সুগন্ধি ব্যবহার করা
- মসজিদে হেঁটে হেঁটে যাওয়ার
- খুতবার সময় চুপ থাকা
- তাহিয়াতুল মসজিদ আদায় করা (মসজিদে প্রবেশ করার পর দুই রাকাত নামাজ পড়া)
উপরে জুমার দিনের ১১ টি আমল সমূহ দেওয়া হয়েছে। শুধু জুমার দিনের আমলসমূহ জানিয়ে হবে না। অবশ্যই চেষ্টা করতে হবে এই জুমার দিনের ১১ টি আমল সমূহ জানার পাশাপাশি নিজে ও পার্শ্ববর্তী লোকজনকে আমল করতে উৎসাহিত করার।
জুমার দিনের গুরুত্ব ও ফজিলত
আমাদের আজকের আর্টিকেল জুমার দিনের ১১ টি আমল এর পাশাপাশি জুমার দিনের গুরুত্ব ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। পবিত্র কোরআন শরীফে আল্লাহ তায়ালার জুমার দিনের গুরুত্ব ও ফজিলত বোঝাতে একটি সূরা নাযিল করেছেন। সূরাটিতে পবিত্র জুমার দিনের এবাদত সম্পর্কে সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা দিয়েছেন মহান আল্লাহ্ তায়ালা।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন,
অর্থ- এই ঈমানদারগণ! জুমার দিনে যখন নামাজের জন্য ডাকা হয় তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং কেনা-বেচা ত্যাগ কর, এটাই তোমাদের জন্য সর্বোত্তম, যদি তোমরা জানতে। সূরা জুমুআ : আয়াত ৯)
জুমার দিনের মর্যাদা – জুমার দিনের ১১ টি আমল
জুমার দিনের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান। জুমার দিনের ১১ টি আমল জানার পাশাপাশি জুমার দিনের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে জেনে নেওয়া যায়। মহান আল্লাহ তায়ালা প্রতি সপ্তাহে মানবজাতির সমাবেশ ও ঈদের জন্যে এই দিন রেখেছিলেন। কিন্তু আগের নবী-রাসুলদের উম্মতরা তা পালন করতে ব্যর্থ হয়েছিল। ইহুদিরা “ইয়াওমুস সাবত” তথা শনিবারকে নিজেদের সমাবেশের দিন নির্ধারণ করে নেয় এবং নাসারারা তাদের সমাবেশের জন্য রোববারকে বেছে নিয়েছে। আল্লাহ তাআলা উম্মতে মোহাম্মদকে তৌফিক দিয়েছেন যে তারা শুক্রবারকে মনোনীত করেছে। হাদিসের একাধিক বর্ণনা হতে পাওয়া যায়;
১। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমরা সর্বশেষে এসেও কেয়ামতের দিন সবার অগ্রগামী হবো। আমরা প্রথম জান্নাতে প্রবেশ করব। যদিও তাদেরকে আমাদের আগে কিতাব দেওয়া হয়েছিল, আর আমাদের কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের পরে। কিন্তু তারা এদের মতভেদে লিপ্ত হয়েছে। এরপর আল্লাহ আমাদেরকে তাদের মতভেদপূর্ণ বিষয়ে সঠিক পথ দেখিয়েছেন। এই দিনটি নিয়ে তারা মতভেদ করেছে। উপর আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে এই দিনে সঠিক হেদায়েত দান করেছেন। সেই দিনটি হচ্ছে জুমার দিন। সুতরাং আজের দিন আমাদের, কালকের দিন ইহুদিদের, আর প্রশু দিন নাসারাদের। (বুখারি ও মুসলিম)
সম্ভবত ইহুদিদের আলোচনার পর পবিত্র কুরআনে জুমার দিন সম্পর্কে আলোচনার কারণ এটাই যে, তাদের ইবাদতের যুগ শেষ হয়ে যাওয়ায় এখন কেবল মুসলমানদের এবাদতের দিনের প্রতি গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। আর সেটি হচ্ছে জুমার দিন। জাহেলী যুগে, এই শুক্রবারের দিনকে ‘ইয়াওমে আরূবা” বলা হত।
আরবে কাব ইবনে নুয়াই সর্বপ্রথম জুমার দিনের নাম রাখেন, “ইয়াওমুল জুমুআ”। কারণ ঝুমা শব্দটির অর্থ একত্রিত করা। এই দিনের কোরাইশদের সমাবেশ হত এবং এই দিনে কাব ইবনে লুয়াই ভাষণ দিতেন।
সর্বশেষ কথা এই যে, ইসলামের আবির্ভাবের আগে কাব ইবনে লুয়াই এর আমলে শুক্রবার দিনকে গুরুত্ব দেওয়া হতো এবং তিনি নিজেই এই দিনের নাম জুমার দিন রেখেছিলেন।
২। তবে বিশুদ্ধ হাদিসের বর্ণনা হতে পাওয়া যায়, আদম আলাইহি ওয়া সাল্লাম সৃষ্টি যে এই একত্রিত করা হয়েছিল বলেই এই দিনটিকে জুমার নামকরণ করা হয়েছে। (মুসতাদরাকে হাকেম, ইবনে খুযাইমা, তাবারানি)
জুমার দিনের দোয়া কবুলের আমল
জুমার দিনের ১১ টি আমল সম্পর্কে জানার পাশাপাশি, জুমার দিনের দোয়া কবুলের আমল সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম আমাদের সাথে একদিন শুক্রবারে ফজিলত ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন। তখন তিনি বলেছেন, জুমার দিনে এমন একটি সময় রয়েছে, যে সময়টায় যদি কোন মুসলমান নামাজ অবস্থায় থাকে এবং আল্লাহর কাছে কিছু চায়। তবে আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই তার চাহিদা বা দোয়া কবুল করবেন এবং এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার হাত দিয়ে ইশারা দেওয়ার মধ্যে সময়টি আমাদের জন্য সংক্ষিপ্ত সেটি ইঙ্গিত দেন। “ বুখারী”
আবু দারদা ইবনে আবু মুসা আশাআরি রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, তিনি জুমার দিনের বিশেষ এই মুহূর্তটির সম্পর্কে বলেছেন। ইমাম যখন মিম্বরে বসেন সেই সময় থেকে নামাজ শেষ করা পর্যন্ত সময়টি জুম্মার দিনের সেই বিশেষ সময়। (মুসলিম, মিশকাত)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বর্ণনা করেছেন, জুমার দিনে রয়েছে ১২ ঘন্টা। এই ১২ ঘণ্টার মধ্যে এমন একটি সময় আছে, যে সময়টিতে আল্লাহর বান্দা আল্লাহর কাছে যা চাইবে আল্লাহ তাআলা তার বান্দাকে তা দিবেন। অর্থাৎ দোয়া কবুলের সময়। অতএব তোমরা আসরের শেষ সময়ে এটি তালাশ করো। (আবু দাউদ, হাদিস নং – ১০৪৮, নাসাঈ, হাদিস নং – ১৩৮৯)
সর্বশেষ
আজকের আর্টিকেলে জুমার দিনের ১১ টি আমল সুন্দরকে আলোচনা করা হয়েছে। জুমার দিন একটি পবিত্র দিন জানা সত্ত্বেও এই জুমার দিনে বেশ কিছু আমল রয়েছে যেগুলো সম্পর্কে আমরা অনেক মুসলমান অবগত নই। অনেকে আবার জুমার দিনের ১১ টি আমল জানার জন্য গুগলে বা বিভিন্ন জায়গায় সার্চ করে থাকেন। বিশেষ করে তাদের জন্য যারা এই আমলগুলো সম্পর্কে জানতে চান এবং আমল করতে চান, আমাদের আজকের আর্টিকেলটি। আজকের আর্টিকেলে জুমার দিনের ১১ টি আমল জানানোর পাশাপাশি জুমার দিনের দোয়া কবুলের আমল, জুমার দিনের মর্যাদা, জুমার দিনের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এমন নতুন নতুন ইসলামিক বিষয় সম্পর্কে জানতে ও শিখতে বেশি বেশি ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইট। ধন্যবাদ।