গর্ভবর্তী মা কী খাবেন?
গর্ভবর্তী মায়ের খাবার টা আসলে কেমন হওয়া উচিত, কী খেলে গর্ভবস্থায় বাচ্চা এবং মা দুজনেই ভালো থাকবেন, অথবা সামগ্রিকভাবে গর্ভবতী মায়ের খাদ্য তালিকা কী, সেটা নিয়েই আজকে আলোচনা করবো।
প্রথমেই বলে নেই, গর্ভকালীন অবস্থার সময়টাকে চিকিৎসকরা কয়েকটা ভাগে ভাগ করে থাকে। যেমন ১ মাস থেকে ৩য় মাস পর্যন্ত সময়টাকে বলা হয় ফাস্ট ট্রামিস্টার (First Trimester) এবং ৪ মাস থেকে ৬ষ্ঠ মাস সময়কে বলা হয় সেকেন্ড ট্রামিস্টার (Second Trimester) এবং ৭ মাস থেকে ডেলিবারি পর্যন্ত সময়কে বলা হয় থার্ড ট্রামিস্টার (Third Trimester)। তো দেখা যায় যে এই সময়গুলোতে কিন্তু পুষ্টির চাহিদা ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। যদিও আমরা এরকম ভাবি যে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পুষ্টির চাহিদা একই রকম থাকবে, কিন্তু এটা একটা ভুল ধারণা। আপনাকে আগে মাথায় রাখতে হবে যে প্রথম যে ট্রামিস্টার টা যাচ্ছে, তখন আপনার ক্যালরির চাহিদাটা কেমন দরকার।
গর্ভবতী মায়ের খাদ্য তালিকা চার্ট
সাধারণত একজন গর্ভবতী মা তার এই বিরূপ পরিবেশে খুবই ভয়ঙ্কর অবিজ্ঞতায় দিন কাটায়। এসময় তাদের পেঁটের সন্তনের সুস্বাস্থ্যের জন্য এবং গর্ভবতী মায়ের ভালোর জন্য প্রয়োজন সঠিক প্রতিদিনের সঠিক একটি খাদ্য তালিকার চার্ট। প্রায় সময় দেখা যায় অনেক গর্ভবতী মা তার সেসময়ের জন্য প্রতিদিনের একটি খাদ্য খাওয়ার রুটিন খুঁজ করে থাকে। আবার অনেকে জানতে চায় সে সময়গুলোতে কী পরিমাণে খাদ্য খাবে অথবা কী কী খাদ্যগুলো তাদের খাদ্য তালিকায় রাখবে তা জানতে চায়। অতঃপর ধারাবাহিক পোস্টে তাদের জন্য নিয়ে আসলাম একটি সঠিক উপায়ে তৈরি খাদ্য তালিকা চার্ট। এই চার্ট দেখে অথবা পড়ে অনায়াসে একজন গর্ভবতী মা তার খাদ্য তালিকা তৈরি করতে পারবে। তবে বলে রাখা ভালো যে, গর্ভবতী মায়ের দিন যত বৃদ্ধি পায়, খাদ্য তালিকায় ততো চেঞ্জ আসে। আর তারই ধারাবাহিকতায় আজকে দেখানো তালিকাটি। চলুন জানা যাক গর্ভবতী মায়ের খাদ্য তালিকার চার্ট টি। গর্ভবতী মায়ের খাদ্য তালিকাটি হলো-
- রুটি অথবা ভাত
- ডাল
- শাকসবজি ( লাল শাক অথবা সবুজ শাকসবজি)
- সিদ্ধ ডিম
- দুধ অথবা দুধের খাবার
- বাদাম
- সামুদ্রিক মাছ
- মাছ-মাংস
- ছোট মাছ
- কলিজা
- প্রোটিন,ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ও মিনারেলস জাতীয় ক্যাপসুল
ফার্স্ট ট্রামিস্টার:
প্রথম ট্রামিস্টারে মেয়েদের ক্যালরির চাহিদা খুব সামান্য থাকে।সর্বোচ্চ ১০০ কিলো-ক্যালরি এক্সট্রা দরকার। অর্থাৎ তার বর্তমান পরিস্থিতি থেকে ১০০ কিলো-ক্যালরি অতিরিক্ত দরকার হয়।
একটা কথা বলে নেওয়া ভালো যে, এসময়ে কিন্তু মেয়েরা অনেক রকম সমস্যায় পড়ে থাকে। দেখা যায় যে, মেয়েদের খাবারটা খেতে পারছে না,গন্ধ লাগছে, বমি হচ্চে ইত্যাদি রকম সমস্যায় পড়ে থাকে। তো এ সময় তাদের চিন্তা করার একদমই কারণ নেই, কারণ তখন তার নিজের জন্য যতটুকু ক্যালরির চাহিদা আছে ততটুকু খেলেই যথেষ্ট।গর্বভর্তী মা এই প্রথম ট্রামিস্টারে যেটা করবে সেটা হলো সকালবেলা সে রুটি অথবা ভাত খাবে সাথে সবজি অবশ্যই খাবে তবে বেশি ভাত খাওয়া যাবে যাবে না, সে একটা ডিম সিদ্ধ খেতে পারে, সে ডালও খেতে পারে। মিড মরনিং এ সে এক গ্লাস দুধ খাবে সাথে একটা ফ্রুটস খাবে।
ডায়াবেটিস রোগীদের নির্দশনা
প্রতিদিন ব্যায়াম করার উপকারিতা
দুপুরবেলা একটু ভাত খাবে, মাছ-মাংস ও সবজি সাথে রাখবে। বিকালবেলা কোনো ফল বা বাদাম অথবা দুধের কোনো খাবার খেতে পারে। রাত্র বেলা ভাত অথবা রুটি খেতে পারে। তো এখানে যে তাঁর দৈনিকের রিকয়ারমেন্ট থাকে আগে থেকেই, সে একই চাহিদা এখানোও থাকবে।
সেকেন্ড ট্রামিস্টার:
সেকেন্ড ট্রামিস্টারটাকে যেটা বলা হয় যে একটা মায়ের বাচ্চার বৃদ্ধির সাথে সাথে কিন্তু মায়েরও পুষ্টিকর খাবারটা বাড়িয়ে দিতে হয়। এ সময় প্রোটিনের চাহিদাটা কিন্তু অনেক বেড়ে যায় এবং ক্যালসিয়াম ও অন্যন্য ভিটামিনের চাহিদাও কিন্তু এই সময় বেড়ে যায়। এই জন্য আপনাকে যেটা করতে হবে আমরা জানি দুধ জাতীয় খাবারগুলোর মাধ্যমে কিন্তু আমাদের ক্যালসিয়াম ও প্রোটিনের প্রয়োজন পূরণ হয়ে যায়। তো এই ক্ষেত্রে আমরা ফার্স্ট ট্রামিস্টারে যেটুকু দুধ খেয়েছে সেকেন্ড ট্রামিস্টারে আরো এক গ্লাস দুধ বাড়িয়ে দিব এবং ডিম যদি একটা খেয়ে থাকি এখানে আমরা ২টা করবো সাথে ছোট মাছ এবং শাকসবজি দৈনিক খাবার তালিকায় রাখবো। যেন প্রতিদিন দুপুর বেলা আমরা কচুর শাক, লাল শাক অথবা সবুজ শাক আমাদের খাদ্য তালিকায় রাখতে পারি। এবং কয়েকদিন পর পর আমরা কলিজা রাখতে পারি আমাদের খাদ্য তালিকায়। এছাড়া আমরা ডালটা প্রতিদিন রাখতে পারি।এভাবে যদি আমরা সেকেন্ড ট্রামিস্টারটা ভালো ভাবে পার করতে পারি তাহলে দেখা যায় যে একটা মার গর্ভে যে বাচ্ছা সেটা সুন্দরভাবে এবং আস্তে আস্তে বেড়ে উঠবে এবং সেকেন্ড ট্রামিস্টার পূরণ করার পর আমাদের চলে আসতে হবে থার্ড ট্রামিস্টারে।
থার্ড ট্রামিস্টার:
এই সময় দেখা যায় যে বাচ্চার চামড়ার নিচে ফ্যাট-টা স্টোর হতে থাকে এবং বাচ্চার ওজনটা গেইন হতে থাকে। জেনে রাখা ভালো যে সেকেন্ড ট্রামিস্টার থেকে থার্ড ট্রামিস্টার পর্যন্ত একটা বাচ্চার ২০-৩০% ব্রেইনের উন্নতি হয়। তো এই সময় একটা মাকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে সে কী কী পুষ্টিকর খাবার খাচ্ছে। শুধু মাত্র খাবার গ্রহণ করলেই চলবে না, তাকে অবশ্যই জানতে হবে সে কোন ধরনের খাবার খাচ্ছে এবং তার বাচ্চার এই মূহর্তে কোন কোন পুষ্টি দরকার সেটাও তাকে মাথায় রাখতে হবে। ব্রেইনের উন্নতির জন্য চিকিৎসকরা বলে থাকে যে EPA এবং DH এর মাত্রা অনেক বেশি দরকার। সেক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যেহেতু একটা মা-র পুষ্টির মাধ্যমে সে বাচ্চাটা পুষ্টি পাচ্ছে তো আপনি প্রতিদিন আপনার খাদ্য তালিকায় কিছুটা বাদাম, সামুদ্রিক মাছ এবং ডিম রাখতে পারেন। পাশাপাশি আপনি ইচ্চা করলে ওমিগা-৩ সাপ্লিমেট একটা করে দৈনিক ক্যাপসুল খেতে পারেন। সেক্ষেত্রে হবে কী বাচ্চার ব্রেইনের উন্নতি মায়ের গর্বে সুন্দরভাবে হয়ে যাবে এবং থার্ড ট্রামিস্টারে অবশ্যই মাকে তার প্রোটিনের দিকটা বরাবর খেয়াল রাখতে হবে যেন প্রোটিনের মাত্রাটা একটু বেশি থাকে। পাশাপাশি ভিটামিন এবং মিনারেলসগুলো যেন ঠিক থাকে সে দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। আর এভাবে খেলে একটা মা তার বাচ্চাকে সুন্দরভাবে জন্মদান দিতে পারবে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সম্পর্কে জানুন