বাংলাদেশের মধ্যে খুবই জনপ্রিয় মৌসুমি এবং সুস্বাদু একটি ফলের নাম হলো লিচু। এছাড়াও লিচুর উপকারিতাও অনেক। ভিটামিন ও খাদ্যশক্তির অন্যতম একটি উৎস হিসেবে কাজ করে লিচু। এছাড়াও এতে রয়েছে আমাদের দেহের প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ।
লিচু ফলে আছে ভিটামিন সি, এ, ক্যালরি, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যথেষ্ট পরিমাণ আঁশ এবং ফ্ল্যাভানয়েডস নামক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। লিচুর মধ্যে আছে জলীয় অংশ অলিগোনাল । মূলত মানব দেহের জন্য লিচু খুবই উপকারি এবং উপকার দ্ধারা আশা করা পৃথিবীল মোটামোটি সবাই উপকৃত হবে।
লিচু হলো বাংলা একটি শব্দ। লিচুর ইংরেজি বা ইংলিশ নাম হলো খরঃপযর। বর্তমানে পুরো বাংলাদেশে এই ফলটি লিচু নামেই পরিচিত। মৌসমি সুস্বাদু ফল হিসেবে লিচু অত্যন্ত উপকারি একটি ফল। প্রায় সব ধরনের মানুষের কাছেই লিচু একটি পছন্দের এবং রুচি সম্পন্ন ফল।
লিচুর উপকারিতাগুলো
সাধারণত যদিও আমরা লিচু খাই এর সুস্বাদুতা এবং মিষ্টান্নতার কারণে। কিন্তু এর পাশাপাশি রয়েছে লিচুর বহুগুণী উপকারিতা। লিচুতে থাকা প্রয়োজনীয় সকল উপাদান আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারি এবং উপাদানগুলো লিচুতে যথেষ্ট পরিমাণে থাকে। তো চলুন জানা যাক লিচুর উপকারিতাগুলো-
- ক্যান্সার নির্মূল করতে সহায়তা করে
- রক্তনালী প্রসারিত করে
- রক্ত চলাচলে উন্নতি ঘটায়
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
- কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হ্রাস করে।
- সুস্থলতা কমায়
- হজমে সহায়তা করে
- চুলের বৃদ্ধি ঘটায়
- তাপমাত্রা ঠিক রাখে
- মস্তিষ্কের উন্নতি ঘটায়
- ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়
উপরোক্ত এই কয়েকটা উপকারিতা ছাড়াও আরো অনেক প্রকার উপকারিতা গুণ রয়েছে লিচুর। তবে আজকের আলোচনার সুবিধার্থে উক্ত বিষয়গুলো নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করা হলো।
ক্যান্সার নির্মূল করতে লিচু
লিচুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে। উক্ত এই ২টি উপাদান কোষের ক্যান্সার নিরাময় করতে সহায়তা করে থাকে। মানব শরীরে ক্যান্সারের নেভিস কোষ থাকে প্রচুর। আর লিচুর মধ্যে থাকা এই উপাদানগুলো নেভিস কোষগুলোকে ধ্বংস করে দেয়।
রক্তনালী প্রসারণে এবং রক্ত চলাচলে লিচু
নাইট্রিক অক্সাইড আমাদের শরীরের রক্তনালী প্রসারিত করতে বেশি সহায়তা করে থাকে। লিচুতে আছে প্রচুর পরিমাণে অলিগোনাল। আমরা যখন লিচু খাই তখন লিচুতে থাকা অলিগোনাল শরীরের অভ্যন্তরে গিয়ে নাইট্রিক অক্সাইড তৈরি করে থাকে। ফলাফল সরূপ, নাইট্রিক অক্সাইড দেহের মধ্যে থাকা রক্তনালীকে আরো প্রসারিত করে থাকে এবং যার ফলে রক্ত চলাচলও বেড়ে যায়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে লিচু
লিচুতে থাকা ভিটামিন –সি আমাদের শরীরের রোগ ইমিউন সিস্টেমের উন্নতি ঘটায়। এছাড়াও এতে আছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট নামক উপাদান। এগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে। এছাড়া ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ও লিচু বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিডনি ভালো রাখতেও লিচু বেশ উপকারি একটি ফল।
কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হ্রাসে লিচু
আমাদের শরীরে থাকা ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট কোসের অস্বাভাবিক বিভাজনকে হ্রাস করে থাকে। এদিকে লিচুতে রয়েছে ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট নামক উপাদান। এই উপাদানটি আমাদের শরীরের থাকা কোষগুলোর অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি হওয়াকে হ্রাস করে থাকে।
স্থুলতা কমায়
লিচুতে থাকে প্রচুর পরিমাণে পানি। পাশাপাশি থাকে ফাইবার এর উপাদান। ফাইবার সাধারণত আমাদের পাকস্থলির হজমি শক্তি বৃদ্ধি করে থাকে এবং লিচুর আরেকটি গুণ হলো এটি আমাদের শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। পাশাপাশি ওজন বা স্থুলতা কমাতেও লিচু সহায়তা করে থাকে।
হজম সহায়তায় লিচু
লিচুতে রয়েছে ফাইবারের অংশ। ফাইবার আমাদের শরীরের পাকস্থলির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে। ফলাফল হিসেবে পাকস্থলির হজমের উন্নতি ঘটে।
চুলের বৃদ্ধি ঘটায়
কপার হেয়ার ফলিকলকে উত্তেজিত করে আমাদের চুলের বৃদ্ধিতে খুবই কার্যকারী। লিচুতে আছে উক্ত উপাদান অর্থাৎ কপার, যা আমাদের চুলের মধ্যে থাকা হেয়ার ফলিকলকে চরমভাবে উত্তেজিত করে এবং চুল বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। চুলের যত্নে লিচু বেশ কার্যকারী এবং ফলফ্রসু একটি ফল।
তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে লিচু
লিচুর মধ্যে থাকা বিশেষ খনিজ পদার্থ রয়েছে। এই খনিজ পদার্থ আমাদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে কার্যকারী ভূমিকা রাখে।
মস্তিষ্কের উন্নতি ঘটাতে লিচু
যেসব শিশু বা মানুষ অতি তাড়াতাড়ি কোনো কিছু সহজেই ভুলে যায় বা মনে থাকে না, তাদের জন্য লিচু বেশ কার্যকারী একটি ফল। লিচু মস্তিষ্কের উন্নতি ঘটায় । মস্তিষ্কের মধ্যে থাকা নার্ভগুলোর উন্নতি ঘটায় লিচু ফল।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে লিচু
রোদে পুড়ে কালো দাগ দূর করতে এবং উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে লিচু খুবই উপকারি একটি ফল। লিচুর চটকে ভিটামিন-ই ক্যাপসুলের সাথে মিশিয়ে ত্বকে ৩০ মিনিটের মতো লাগিয়ে রাখলে ত্বকের বেশ উন্নতি ঘটে সাথে রাতারাতি ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনে। এছাড়াও ত্বকের যত্নে মূলত লিচু খুবই কার্যকারী একটি ফল।
লিচু সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন ও উত্তর
লিচুতে আশে তাপ নিয়ন্ত্রণের বিশেষ খনিজ উপাদান। যখন আমরা মাত্রাতিরিক্ত লিচু ভক্ষণ করি, তখন আমাদের শরীরের তাপমাত্রা অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যায়। মাঝে মাঝে কারো গলা ব্যথাও হতে পারে।
এটাও আগেরটার মতো সেইম উত্তর। অর্থাৎ সীমিত পরিসরে লিচু খেলে গর্ভবস্থায় কোনো রকম ক্ষতি হয় না। তবে বেশি খেলে বমি বমি ভাব হতে পারে এবং গলা ব্যথা করতে পারে। গর্ভবস্থায় খাওয়ার নিয়ম মেনে সব কিছু খেতে হবে।
উপরোক্ত বিষয়গুলো থেকে বোঝাই যাচ্ছে যে লিচু অনেক উপকারিতা রয়েছে কিন্তু আমরা তা অনেকেই জানতাম না। আজকের আর্টিকেলের মধ্য দিয়ে আমরা লিচুর উপকারিতা গুলো জানলাম। আশা করি, আর্টিকেলটি পড়ে সবাই উপকৃত হবেন।