শিশুদের অনেকে বিদ্যালয়ে না যেতে নানা রকম বাহানা দেখায়। কেউ কেউ আবার বিদ্যালয় নিয়ে সত্যিই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকে। একে বলা হয় শিশুদের স্কুল ভীতি বা বিদ্যালয় ভীতি।
স্কুল ভীতিতে ভোগা শিশুরা বিদ্যালয় নিয়ে তাদের দুশ্চিন্তার কথা সরাসরি মা বাবাকে জানায় না। শিশুর স্কুল ভীতি দূর করার কৌশল নিয়ে এই পোষ্ট এ আলোচনা করা হল ।
সাধারণত যেসমস্ত কারণে শিশুর স্কুলভীতি তৈরী হয়
১. স্কুলে যাওয়ার কারণে বাবা মায়ের কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে এই স্কুলভীতিতে।
২. সাধারণত খুব বেশী পড়ালেখার ব্যাপারে মনোযোগী ছিল কিন্তু এখন আর আগের মতো পারফরমেন্স মেইনটেইন করতে পারছে না , সেসব বাচ্চারা স্কুলভীতিতে ভোগে ।
৩. ফ্যামিলিয়াল ট্রোমা: এই যেমন ফ্যামিলিতে ডিভোর্স, সেপারেশন, প্রিয়জনের মৃত্যু, আর্থিক দৈন্যতার কারণে বাচ্চারা স্কুলভীতিতে ভোগে।
৪. শারীরিক অসুস্থতা বা অন্য কোন কারণে বাচ্চা অনেকদিন স্কুলে না গেলে পরে আর যেতে চায় না।
৫. সন্তান যদি স্কুলে শারীরিক কিংবা মানুষিকভাবে বন্ধুদের দ্বারা হেনস্তার শিকার হয় তবে এইসব যাতে এড়িয়ে চলা যায় এজন্যেও কিন্তু সে স্কুলে যেতে চাইবে না।
৬. স্কুলের শিক্ষকরা সব সময় নেগেটিভ ক্রিটিসাইজ করলে অথবা অন্য কোন ভাবে শারীরিক বা মানসিক শাস্তি দিলে বাচ্চারা স্কুলে যাওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে ।
৭. শিশুরা তার বাবা মায়ের ইমোশন দ্বারা খুব সহজেই প্রভাবিত হয় । তাই বাবা-মা দুশ্চিন্তা কিংবা উদ্বেগে ভুগলে শিশুরাও এসব নিজের মধ্যে ধারণ করতে শুরু করে। ফলে আর স্কুলে যেতে চায় না।
৮. বাবা মায়ের অতিরিক্ত আদর ও কিন্তু স্কুল ভীতির একটা কারণ। এতে বাচ্চার কনফিডেন্স লেভেল কমে যায় আর বাচ্চা মা বাবার প্রতি অতিরিক্ত নির্ভরশীল হওয়ার ফলে নতুন পরিবেশে খাপ খাওয়াতে সমস্যা হয়।
এছাড়া আরো অনেক কারণ থাকতে পারে আপনার শিশুর স্কুলে না যাওয়ার পিছনে। কিন্তু একজন অভিভাবক হিসাবে আমাদের করণীয় হচ্ছে আসল কারণ খুঁজে বের করে শিশুকে স্কুলে পাঠানো এবং তার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিৎ করা। শিশুর স্কুল ভীতি দূর করার কৌশল আপনি অবলম্বন করতে পারেন। যা আপনার শিশুর ভীতি দূর করতে সাহায্য করবে।
আসুন জেনে নেই শিশুর স্কুল ভীতি দূর করার কার্যকরী উপায় সমূহ
১) সন্তানের সঙ্গে কথা বলুন: (Talk to the child)
প্রথমেই শিশুর সঙ্গে কথা বলে স্কুলে যেতে না চাওয়ার কারণ গুলো বোঝার চেষ্টা করুন। শিশুকে বিশ্বাস করুন। স্কুলে না যেতে চাওয়ার পিছনে অনেক রকম কারণ থাকতে পারে। সেগুলো খোঁজার চেষ্টা করুন। কথা বলেই একমাত্র তার মনের ভাব বুঝতে পারবেন। অযথা শিশুকে অবিশ্বাস করে স্কুলে জোর করে পাঠানোর মতো ভুল করবেন না।
২) শিশুর স্কুলে পড়াশোনা বোঝার অসুবিধে: (Difficulty understanding the child’s schooling)
স্কুলে অনেক শিশুর সঙ্গে আলাদা করে কোনও একটি শিশুর প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়া শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। ফলে পড়াশোনা বোঝার ক্ষেত্রে কমতি থেকে যায়। সেক্ষেত্রে পরে পড়া ধরলে আপনার শিশু নাও পারতে পারে। বাকি বন্ধুদের সামনে সেটাই হয়তো তার লজ্জার কারণ।
তাই পড়াশোনা বোঝার ক্ষেত্রে কোনও অসুবিধে হচ্ছে কিনা সেটা বুঝতে চেষ্টা করুন। আপনি বাড়িতে পড়াতে বসলেই অনেকটা পরিষ্কার হয়ে যাবে। সেটা সমস্যা হলে অবিলম্বে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকার সঙ্গে কথা বলুন।
৩) স্কুলে শিশুর ভরসার মানুষ না থাকা : (Children do not have confidants at school)
বাড়িতে হয়তো আপনার সন্তানের সবচেয়ে ভরসার জায়গা আপনি। স্কুলেও এমন কাউকে ভরসার জায়গা হয়ে উঠতে হবে। সেটা কোনও শিক্ষক বা শিক্ষিকার পক্ষেই সবথেকে ভাল সম্ভব। যাতে স্কুলে থাকাকালীন যে-কোনও সমস্যা সেই ভরসার মানুষকে গিয়ে কোন ওরকম সংকোচ ছাড়াই আপনার সন্তান জানাতে পারে। স্কুলে সেই ভরসার মানুষকে খুঁজে পেতে সন্তানকে সাহায্য করুন।
৪) স্কুলে বন্ধু তৈরি করতে শেখান: (Learn to make friends at school)
স্কুলের ভয় কাটিয়ে তোলার সবচেয়ে ভাল উপায় হল বন্ধু তৈরি করা। যা কিছু ভাল লাগে তার কারণ স্কুলে বন্ধু তৈরি। তার মধ্যে অন্যতম হল বন্ধুত্ব। সহপাঠীদের সঙ্গে যাতে আপনার সন্তান সহজে মিশে যেতে পারে, তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব তৈরি করতে পারে, সেদিকে খেয়াল রাখুন।
স্কুলে টিফিন শেয়ার করতে শেখান। সম্ভব হলে স্কুলের পরেও কিছু সহপাঠীর সঙ্গে খেলার সুযোগ করে দিন । এতে আলাদা বন্ডিং তৈরি হবে। ধীরে-ধীরে কেটে যাবে স্কুলে যাওয়ার ভয়।
৫) অন্যান্য অ্যাক্টিভিটি: (Other Activities)
পড়াশোনা ছাড়াও আপনার সন্তান স্কুলে গিয়ে যাতে নাচ, গান, আঁকা, আবৃত্তি, ক্যারাটের মতো বিভিন্ন কাজে অংশ নিতে পারে সেদিকে নজর দিন। হতেই পারে বাঁধাধরা পড়াশোনা ওর তেমন ভাল লাগছে না। অন্য অ্যাক্টিভিটিতে আপনার সন্তান অনেক বেশি পারদর্শী। সেই কাজটা স্কুলে গিয়ে করার আগ্রহ থাকলে স্কুলে যেতে না চাওয়ার ভয় কেটে যাবে দ্রুত।
৬) বিভিন্ন সময়ে পুরস্কার দিন: (Give rewards at different times)
পরীক্ষায় একজনই প্রথম হবে। সকলে ফার্স্ট হয় না। এই বোধটা ছোট থেকেই সন্তানের মধ্যে তৈরি করুন। স্কুলে হয়তো প্রথম ছাত্র বা ছাত্রীকে পুরস্কৃত করা হয়। কিন্তু আপনার সন্তান হয়তো সেই তালিকায় পড়ে না। আপনি সন্তানকে পুরস্কার দিন।
শুধুমাত্র পরীক্ষায় ভাল ফল করলেই নয়, যে-কোনও ছোট কাজে পুরস্কার দিয়ে ওকে উৎসাহিত করুন। যেমন কোনও একটা মাসে একদিনও স্কুল কামাই না করলে ওর পছন্দের একটা বই বা খেলনা বা খাবার কিনে দিন। এতেও ধীরে-ধীরে দূর হবে স্কুলের ভীতি।
৭) কোনও অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটছে না তো ? (No untoward incident is happening?)
এই বিষয়টা মা-বাবা হিসেবে আপনার মনে রাখা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। এমন কোনও অবাঞ্ছিত হেনস্থার মুখে আপনার শিশু পড়ছে না তো, যাতে ওর স্কুলে যাওয়াটাই আতঙ্কের হয়ে উঠছে?
কোনও শিক্ষক, শিক্ষিকা, কোনও বন্ধু, এমনকি কোনও শিক্ষক কর্মচারী শিশুর সঙ্গে এমন কোনও আচরণ করছে না তো , যেটা ও কাউকে বুঝিয়ে বলতে পারছে না? সেটা ভাল করে নজরে রাখুন। আর যে-কোনও পরিস্থিতিতে যে কোনও কথা শিশু যাতে অন্তত আপনাকে সরাসরি বলতে পারে সেই রাস্তাটা খোলা রাখুন। শিশুর স্কুল ভীতি দূর করা আপনার একান্ত কর্তব্য। সন্তানের অভিভাবক পরে, আগে বন্ধু হয়ে উঠুন।
শেষ কথা :
শিশুর স্কুল ভীতি যদিও অনেকে ভাবেন স্বাভাবিক একটি বিষয় কিন্তু অনেকদিন ধরে চলতে দিয়ে দৃষ্টিগোচরে না আনলে এতে বাচ্চার একাডেমিক পারফরমেন্স খারাপসহ অন্যান্য সাইক্রিয়াট্রিক ডিসঅর্ডার দেখা দিতে পারে যা বাচ্চাকে বড় বেলায়ও ভোগাবে।
জন্ডিস রোগের ঘরোয়া টোটকা বা চিকিৎসা (Home remedies for Jaundice)
বদহজম থেকে দ্রুত মুক্তি পাওয়ার ঘরোয়া উপায় (Home remedies to get rid of indigestion fast)
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে যেসব খাবারে (Foods that increase immunity)