আদিকাল থেকেই যেন গ্রাম বাংলার মানুষের ঐতিহ্যের সাথে যেন মিশে আছে সরিষার তেল। ঔষুধিগুণ থাকায় আদিকাল থেকেই আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ব্যবহার হয়ে আসছে সরিষার তেল। গবেষণায় দেখা যায়, ওমেগা আলফা-3 এবং ওমেগা আলফা-6 ফ্যাটি এসিড, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ স্বাস্থ্যকর তেল হিসেবেও পরিচিত এটি।
সরিষার তেলের খাওয়া নিয়ে তর্ক বিতর্কের শেষ নেই। তবুও আমরা বাঙ্গালিরা এটি ছাড়তে পারবো না! বাংলাদেশ সহ ভারতীয় উপমহাদেশে একসময় রান্নায় কাজে সরিষার তেল ছাড়া ভাবাও যেতো না। কারণ খাটি সরিষার তেলের রয়েছে যেমন স্বাস্থ্যের উপকারিতা তেমন রয়েছে এর সুগন্ধও। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করবো খাঁটি সরিষার তেলের নানান স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে।
যারা বুদ্ধিমান এবং সরিষার তেলের গুণাগুন সম্পর্কে অবগত আছেন, তারা নিয়মিত ব্যবহার করে চলেছেন সরিষার তেল। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত তেলটি ব্যবহার করে রান্না করা খাবার খেলে শরীরের অনেক উপকার হয়, এছাড়াও বাড়ে আয়ু।
সরিষার তেলের উপকারিতা
- রান্নায় সরিষার তেলের উপকারিতা
- চুলে সরিষার তেলের উপকারিতা
- সরিষার তেল গায়ে মালিশের উপকারিতা
- ত্বকের যত্নে সরিষার তেল
- সরিষার তেল মুখে দিলে কি হয়
- সরিষার তেল মাথায় দিলে কি হয়
- রসুন আর সরিষার তেলের উপকারিতা
- হার্টের জন্য সরিষার তেল
- রোগ প্রতিরোধের জন্য সরিষার তেল
- ঠোঁট ফাটা রোধে সরিষার তেল
- চুল পাকা রোধে সরিষার তেল
- ক্যান্সারের ঝুকি কমাতে সরিষার তেলের উপকারিতা
রান্নায় স্বাদ বাড়ায়
গ্রাম বাংলায় দীর্ঘ দিন থেকে মানুষ তাদের রান্নার কাজে সরিষার তেল ব্যবহারে করে আসছে। বর্তা, সবজি বা সালাদে প্রতিনিয়ত ব্যবহৃত হতো সরিষার তেল। এছাড়াও রান্নার কাজেও ব্যবহৃত হতো সরিষার তেল। রান্নার ক্ষেত্রে সরিষার তেল ব্যবহারের ফলে কোলেস্টেরল পরিমাণ কমায় পাশাপাশি মূত্রের জ্বালাপোড়া ভাবও দূর হয়।
চুলের যত্নে
প্রাচীন কাল থেকেই চুলের যত্নে সরিষার তেল ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এছাড়া আছে নানা সরিষার তেলের উপকারিতা চুলের ক্ষেত্রে।
চুলকে মসৃণ, সুন্দর, উজ্জ্বল ও স্বাস্থ্যসম্মত করার জন্য সরিষার তেল বরাবর অনেক উপকারী। সরিষার তেলে থাকে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড যা চুল কে দ্রুত বড় করতে সাহায্য করে। এছাড়াও সরিষার তেলে থাকে অ্যান্টি ফাঙ্গাল এর উপাদান যা চুলে খুসকি ভাব দূর করে। সাধারণত আমাদের চুলের গুড়ায় থাকে ফাঙ্গাল যা চুলকে পড়তে সাহায্য করে আর সরিষার তেলে থাকা অ্যান্টি ফাঙ্গাল চুল পড়া হতে রক্ষা করে।
সরিষার তেল গায়ে মালিশ
গায়ের তাপমাত্রা কমতে সরিষার তেল ব্যাপক ভূমিকা রাখে। যখন কেউ গায়ে সরিষার তেল মালিশ করে তথন তার শরীরে রক্ত সঞ্চালন আগের চেয়ে বৃদ্ধি পায় পাশাপাশি ঘর্মগ্রন্থিগুলো উদ্দীপিত হয়।
যে কারণে শরীরের তাপমাত্রা মূহর্তে কমে যায়। এছাড়া আছে সরিষার তেলের অনেক উপকারিতা।
ত্বকের যত্নে সরিষার তেল
ত্বকের তামাতে ভাব দূর করার জন্য, ত্বকের দাগ দূর ও উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে সরিষার তেল মহামূল্যবান। কিন্তু কীভাবে?
বেসন, দই, সরিষার তেলের সাথে কয়েকফোটা লেবুর রস একসাথে মিশ করে ত্বকে কয়েক মিনিট লাগিয়ে রাখলে ত্বকের তামাতে ভাবে সাথে সাথেই দূর হয়। ১০-১৫ মিনিট গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন এবং ভালো ফলাফলের জন্য সপ্তাহে কয়েকবার এভাবে ব্যবহার করুণ। এতে করে ত্বকের অনেক উপকার হয়।
সরিষার তেল মুখে দেওয়া
মুখের ডার্ক স্পট, রিংকল, টেগ বা পিগমেন্টেশন ঠেকাতে সরিষার তেলের সাথে দই ও লেবুর রস মিশিয়ে মুখে মালিশ করে দিতে হবে। মুখে মাখার ১০-২০ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে । এতে করে মুখের ডার্ক স্পটগুলো দূর হয়ে উজ্জ্বলতা একটা ভাব তৈরি করবে।
সরিষার তেলের মাধ্যমে মাথার খুসকি দূর করা
সরিষার তেল মাথায় দেওয়ার উপকারিতা অনেক। সরিষার তেল বাচ্চারা মাথায় দিলে যেমন উপকার পায় তেমনি বড়রাও।
সরিষার তেলে আছে ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড এবং এটি এন্টি ফ্যাঙ্গাল হিসেবে কাজ করে যা চুল বড় হতে খুসকি দূর করতে সাহায্য করে। সরিষার তেল মাথায় দিলে মাথায় রক্ত সঞ্চালন ভালোভাবে হয় এবং চুলের গোড়া মজবুত ও স্বাস্থ্যসবল হয়, এতে করে চূলপড়া সম্পূর্ণরুপে বন্ধ হয়ে যায়।
এছাড়াও আছে আরো অনেক উপকার। তারমধ্যে হলো খুসকি দূর করে সরিষার তেল। চুলে আনে উজ্জ্বলতা একটা ভাব।
হার্ট সুস্থ্য করে
সরিষার তেল এন্টি মাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি হিসেবে কাজ করে আমাদের দেহে। আমরা যখন সরিষার তেল খাই তখন এটি আমাদের শরীরে রক্ত সঞ্চালনকে ব্যাপক সহায়তা এবং উন্নত করে। এতে করে হজমে উন্নতি ঘটে এবং রক্ত সঞ্চালন এর সহায়তার জন্য হার্টের কাজ মসৃণ হয়। আর এ কারণেই সরিষার তেল হার্টের জন্য অনেক উপকারি।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
খাটি সরিষার তেলে আছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি ফাঙ্গালের বৈশিষ্ট্য যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধের জন্য অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল খুবই প্রয়োজন পাশাপাশি মাথা এবং চুলের যত্নে অ্যান্টি ফাঙ্গালের উপকারিতা অপরিসীম।
ঠোট ফাটা রোধ করে
শীতকালে সরিষার তেল ঠোঁট ও ত্বকে মালিশ করলে ফাটা জাতীয় সমস্যা থেকে খুব উপকার পাওয়া যায়। শীতকালে বাতাসে প্রচুর আদ্রতা থাকে যে কারণে আমাদের শরীর থেকৈ পানি বের হয়ে যায় এবং শরীরকে শুষ্ক করে ফেলে। এতে করে শরীর তথা ঠোট ও অন্যান্য অংশে ফাটল সৃষ্টি হয়। কিন্তু সরিষার তেল ব্যবহার করলে এটি আর হয় না। অর্থাৎ ঠোট ফাটা তৈরি হয় না তেলের উপকারিতায়।
চুল পাকা রোধ করে
সরিষার তেলে আছে ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড। এটি মূলত চুলের জন্য খুবই উপকারি। এটি চুলের ফলিকল ও গোড়া মজবুত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং এটি সরিষার তেল থেকে আমরা প্রাকৃতিক ভাবেই পেতে পারি।
সরিষার তেলে আছে অ্যান্টি ফ্যাঙ্গাল যা চলকে অকালে পেকে যাওয়া হতে রোধ করে পাশাপাশি চুল পড়াও বন্ধ করে এবং মাথার খুসকি দূর করে।
ক্যান্সারের ঝুকি কমায়
সরিষার তেলে আছে গ্লুকোসিনোলেট উপদান যা সবার কাছে অ্যান্টিকারসিনোজেনিক হিসেবে পরিচিত। এটির কাজ হলো ক্ষতিকারক টিউমার সৃষ্টিতে বাধা দেওয়া এবং অন্য রোগ প্রতিরোধ করা। আমরা জানি ক্যান্সার সাধারণত একপ্রকার টিউমারের মতো বা টিউমারের মাধ্যমে অনিয়ন্ত্রিত কোষ বৃদ্ধির মাধ্যমে হয়। সরিষার তেলে থাকা উপাদানেগুলো কারণে এসব ক্ষতিকারক বা কোনো প্রকার টিউমার সৃষ্টি হতে পারে না। যে বিধায় একজন প্রতিনিয়ত সরিষার তেল ব্যবহারকারী এই উপকারগুলো নিতে পারে সরিষার তেল ব্যবহারের মাধ্যমে।
রসূন আর সরিষার তেলের উপকারিতা
সর্দি ও কাশি ভালো করার জন্য প্রাচীন কাল থেকেই রসূন ও লবণাঙ্গের সাথে সরিষার তেলের ব্যবহার দৃশ্যনীয়। সরিষার তেলে আছে ঝাঝালো উপাদান শ্লেষ্মা যা সাইনাস পরিষ্কার করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। রসূন আর সরিষার আরো অনেক উপকারিতা আছে যা ধাপে ধাপে পরবর্তী পোস্টে জানানো হবে।
বলতে গেলে সরিষার তেলের উপকারিতাই বেশি। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে কিছুটা অপকারিতা রয়েছে সরিষার তেলের। কিন্তু এসব অপকারিতা ক্ষতিকর দিক চাইলেই একজন খুব সহজেই পরিহার করতে পারবে।
সরিষার তেলের অপকারিতাগুলো হলো
- অন্য তেলের তুলনায় সরিষার তেলের দাম একটু বেশি
- অনেক এলার্জি জাতীয় রোগীদের জন্য সামান্য সমস্যা
- তরকারিতে সরিষার কিছু গন্ধ থেকে যায়
সরিষার তেলের অপকারিতা খুজলে এর বেশি পাওয়া যাবে না। কেননা এর অপকারিতার চেয়ে উপকারিতার বৈশিষ্ট্যই বেশি।
খাঁটি সরিষার তেল চেনার উপায়
- নকল সরিষার তেল সুতির কাপড়ে ফেললে কাপড়ে দাগ পড়ে কিন্তু আসল সরিষার তেলের ক্ষেত্রে তা হয় না
- নকল সরিষার তেলে প্রচুর তীব্র ঝাঝালো গন্ধ হয় কিন্তু আসলের ক্ষেত্রে তা হয় না
- ফ্রিজে রাখার পর তেল যদি জমে যায় তাহলে মনে করবেন এটি নকল সরিষার তেল
- হাতের তালুতে তেল রেখে ঘষুন। যদি তেলের বর্ণের পরিবর্তন ঘটে তাহলে ভাবুন সরিষার তেলটি নকল
সরিষার তেলের উপকারিতা সম্পর্কে শেষ কথা
যদি সংক্ষিপ্তে সরিষার তেল সম্পর্কে বলতে হয় তাহলে বলা যায় এর অপকারিতার চেয়ে উপকারিতার দিকগুলোই বেশি। আদিকালের মানুষগণ অন্য তেলের তেকে সরিষার তেলকে বেশি প্রাধান্য দিত কিন্তু বর্তমানে তার উল্টো অর্থাৎ সয়াবিন তেল ও অন্যান্য তেলগুলো ব্যবহার করে স্বাস্থ্যের অবনতি হচ্ছে। তবে বর্তমানেও অধিকাংশ একটা মানুষ সরিষার তেল তাদের রান্না ও অন্যান্য কাজে ব্যবহার করছে।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ নগদ ব্যাংকিং সম্পর্কে সকল তথ্য জানতে এটি পড়ুন এবং বিকাশ সম্পর্কে জানতে এটি পড়ুন